সাংসদ মোরশেদ আলমকে আহ্বায়ক করায় যুগ্ম আহ্বায়কের পদত্যাগ

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক জাফর আহম্মদ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর আহম্মদ চৌধুরী। গতকাল বুধবার রাতে নিজের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি ওই ঘোষণা দেন। নোয়াখালী-২ আসনের সাংসদ মোরশেদ আলমকে আহ্বায়ক করায় তিনি ওই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগের পর জাফর আহম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি আমি। সেখানে আমাকে আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করে অপমান করা হয়েছে। আর তারা সেনবাগে আওয়ামী লীগের এত নেতা, তাদের কাউকে আহ্বায়ক না করে অন্য উপজেলা থেকে লোক এনে এখানে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বনানো হলো। এর অর্থ হলো, এখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য কোনো লোক নাই। এ ঘটনায় আমরা লজ্জিত। কারণ, মানুষ আমাদের ধিক্কার দিচ্ছে। মানুষ আমাদের বলছে, সেনবাগে যোগ্য লোক নাই। তাই আমি এমন কমিটিতে থাকার প্রয়োজন মনে করি না। আমি যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’

দীর্ঘ ১০ বছর পর গত মঙ্গলবার নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। অনুমোদিত কমিটির তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পরপরই শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। অভিযোগ ওঠে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ওই কমিটিতে ত্যাগী অনেক নেতার ঠাঁই হয়নি। অথচ ওই কমিটিতে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের মামলার আসামি, আমেরিকাপ্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবীসহ অনেক অচেনা ব্যক্তির নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। ওই সম্মেলনে জাফর আহম্মদ চৌধুরী সভাপতি ও সেনবাগ পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আবু জাফর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৫ সালে ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি ছিল না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ৬৯ সদস্যবিশিষ্ট সেনবাগ উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনের  সাংসদ মোরশেদ আলমকে। তিনি অবশ্য ইতিপূর্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না এবং তাঁর বাড়ি পাশের সোনাইমুড়ী উপজেলায়। আর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ ছয়জনকে। তাঁরা হলেন সাবেক সভাপতি জাফর আহম্মদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম মানিক, মো. বাহার উল্যা বাহার, শওকত হোসেন কানন ও আবু জাফর টিপু। এর মধ্যে জাফর আহম্মদ চৌধুরী সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সভাপতি ও আবু জাফর টিপু সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর বাহার উল্যাহ বাহার ইতিপূর্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তবে তিনি বর্তমানে আমেরিকাপ্রবাসী। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন।

সূত্র জানায়, আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে ঠাঁই হয়েছে সাংসদ মোরশেদ আলমের ব্যক্তিগত সহকারী এস এ আজাদ সুমন, কেশারপাড় ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসরাফিল মাস্টার, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ মামলার আসামি মো. ইসমাইল হোসেন খানের।  

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, অতীতে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেলে গেছেন এবং দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের অনেকেরই ঠাঁই হয়নি। ঠাঁই হয়েছে অনেক বিতর্কিত ও অচেনা মুখের। যাদের কখনো আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

বিতর্কিত ব্যক্তি ও সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কেরা সদস্য হিসেবে যাঁদের নাম প্রস্তাব করেছেন, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে জেলার কারও কোনো পছন্দ ছিল না। একটি কমিটি গঠন করলে প্রতিক্রিয়া, আলোচনা, সমালোচনা হতে পারে। তবে সরকারি চাল আত্মসাতের মামলার আসামি যদি কেউ কমিটিতে থেকে থাকেন, তাঁকে বাদ দেওয়া হবে।

আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বক্তব্য জানার জন্য সাংসদ মোরশেদ আলমকে গতকাল বৃহস্পতিবার ও আগের দিন বুধবার একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।