সাকিমা–সাবিদের পাশে দাঁড়াতে চান অনেকেই

অসহায় দুই শিশু সাকিমা-সাবিদের বাড়িতে গিয়েছিলেন কালীগঞ্জের ইউএনও সাদিয়া জেরিন। গতকাল উপজেলার বড়-ঘিঘাটি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

শিশু সাকিমা আক্তার মারিয়া (৯) ও সাবিদ হাসানের (৬) পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন অনেক হৃদয়বান মানুষ। দেশে এবং প্রবাসে থাকা অনেক ব্যক্তি তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের অনেকে শিশু দুটির দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ সাকিমা-সাবিদকে নিজেদের বাড়িতে রেখে বড় করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাকিমা-সাবিদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া জেরিন। সরকারি শিশু পরিবারে রেখে শিশু দুটিকে বড় করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন ইউএনও।

সাকিমা ও সাবিদের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বড়-ঘিঘাটি গ্রামে। তাদের মা সম্প্রতি পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এরপর ২০ মার্চ মারা যান শিশু দুটির বাবা আবদুল মজিদ। তাদের নিয়ে গত বুধবার প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে ‘সাকিমা-সাবিদ এখন কোথায় যাবে?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান ও প্রবাস থেকে অনেকে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সংবাদটি পড়ে অনেকেই প্রথম আলো প্রতিনিধির সঙ্গেও মুঠোফোনে কথা বলেন।

সাকিমা-সাবিদের চাচা আজিজুল ইসলাম বলেন, তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন কথা বলেছেন। তাঁদের কেউ কেউ সাকিমা ও সাবিদের দায়িত্ব নিতে চান। আবার কেউ কেউ দত্তক নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

আজিজুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ গতকাল দুপুরে ইউএনও সাদিয়া জেরিন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কৌশিক খানকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন। এ সময় ইউএনও তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলেন এবং সাকিমা-সাবিদকে সরকারি শিশু পরিবারে রেখে বড় করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তাঁদের পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ইউএনও। এ সময় তাঁরা বিষয়টি ভেবে পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে ইউএনওকে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

নিয়মিতভাবে শিশু দুটির খোঁজখবর রাখবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও সাদিয়া জেরিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শিশু দুটি বর্তমানে অসহায়। তাই তিনি সরকারি শিশু পরিবারে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে সাকিমা-সাবিদের মা সোনিয়া আক্তার বাড়ি থেকে চলে যান। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি অন্য এক যুবককে বিয়ে করেছেন। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে আবদুল মজিদ একরকম পথে পথেই ঘুরতেন। দুশ্চিন্তায় দিন পার হতো তাঁর। ১৮ মার্চ সকালে ঘরে একা শুয়ে ছিলেন মজিদ। দুই সন্তান বাইরে খেলা করছিল। এ সময় বুকে ব্যথা উঠলে অচেতন অবস্থায় ঘরের মধ্যে পড়ে থাকেন মজিদ।

প্রতিবেশীদের একজন এসে তাঁকে এভাবে দেখে চিৎকার দিলে অন্যরাও এগিয়ে আসেন। তাঁরা মজিদকে নিয়ে যান কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাঁকে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ মার্চ সকালে তিনি মারা যান।