সান্তাহারে আগুনে মৃত পাঁচ শ্রমিক একটি কক্ষে আটকা পড়েছিলেন
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভা এলাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া পাঁচজনই একটি কক্ষে আটকা পড়েছিলেন। আগুন ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে তাঁরা আর কারখানার ওই কক্ষ থেকে বের হতে পারেননি। আগুনে পুড়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের চেহারা এত বিকৃত হয়েছে যে দেখে চেনার উপায় নেই।
আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পৌরসভার হেমতখালী এলাকায় বিআইআরএস নামের একটি প্লাস্টিকের থালা নির্মাণ কারখানা আগুন লাগে। খবর পেয়ে প্রথমে বগুড়া ও নওগাঁর ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে আরও ছয়টি ইউনিট যুক্ত হয়। সব মিলিয়ে ১২টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কারখানাটির পশ্চিম অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কারখানায় দাহ্য পদার্থ ও থালা তৈরির কাঁচামাল থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কারখানার শ্রমিকেরা দৌড়ে কারখানার বাইরে বের হতে থাকেন। আগুন ও প্রচণ্ড ধোঁয়ায় কারখানার একটি কক্ষে পাঁচ শ্রমিক আটকা পড়েন। পাঁচজনই দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাঁদের বীভৎস লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় আর কেউ দগ্ধ ও হতাহত হননি। লাশ উদ্ধারের সময় স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। কারখানার শ্রমিক শাহাজাহান আলী, শিহাব হোসেন ও আবদুল খালেকের পরিবারের সদস্যরা লাশ দেখার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু লাশ দেখে শনাক্তের উপায় নেই।
কারখানার স্বত্বাধিকারী ও সান্তাহার পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগুনে কারখানার যন্ত্রাংশ ও অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাঁর কারখানায় ৭১ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক গোলাম মোরশেদ বলেন, পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়া পাঁচটি লাশ আদমদীঘি থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগের উপপরিচালক মোমতাজ উদ্দীন ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন।
লাশগুলোর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দীন। আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, আগুনে পাঁচজনের মৃত্যুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি বগুড়া জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।