সাড়া ফেলেছে মুক্তির বন্ধনের বিনা মূল্যের হাট

চলছে বিনা মূল্যের হাটের কার্যক্রম। আজ বুধবার ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ির ইরা গ্যাস স্টেশন চত্বরে
ছবি: প্রথম আলাে

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় বিনা মূল্যের হাট বসিয়েছে ‘মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পবিত্র রমজান মাসে সেখান থেকে বিনা মূল্যে বিভিন্ন সামগ্রী নিতে পারছেন করোনাকালে অসহায় হয়ে পড়া ব্যক্তিরা।

হাটটি বসানো হয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ইরা গ্যাস স্টেশন চত্বরে। হাটের কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা চমৎকার। সেখানে বিনা মূল্যে সবজি ও তাজা মাছ অসহায় ব্যক্তিদের বাজারের থলেতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতি দরিদ্র লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আজ বুধবার পর্যন্ত এই হাট থেকে দুই হাজার মানুষকে সহায়তা করা হয়েছে।

করানাকালে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে আজ চতুর্থ দিনের মতো হাট বসানো হয়। হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে। ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সংগঠক অনিক কুমার নন্দী বলেন, ‘এখানে হাট বসানোর ফলে সহজেই ঈশ্বরগঞ্জের পাশাপাশি নান্দাইল ও নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। প্রতি হাটে আমাদের প্রায় ১৫০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবী পালা করে শ্রম দিয়ে থাকেন। আমরা মাছ ও সবজি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করি। কৃষকেরাও আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে সহায়তা করে থাকেন। ফলে করোনাকালে কৃষকেরাও লাভবান হচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা এসব পণ্য হাটে এনে সাজিয়ে রাখার পাশাপাশি হাটুরেদের থলেতে যত্নসহকারে এসব পণ্য তুলে দেন। হাটে আসা সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার পাশাপাশি মুখে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়।’

সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী, উপদেষ্টা ও দাতাদের আর্থিক সহায়তায় এই কর্মসূচি চলছে। ফাউন্ডেশনের তিন হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। নিবন্ধিত দাতা রয়েছেন ১২০ জন। আর্থিক সহায়তা করলেও দাতাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চান না।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে এ হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার এ হাট বসে। প্রতি হাটে ৫০০ দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করা হয়। বুধবার পর্যন্ত চারটি হাটে মোট দুই হাজার মানুষকে সহায়তা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংকোচ থেকে যাঁরা হাটে আসতে চান না, তাঁদের জন্য ফাউন্ডেশনের একটি ফোন নম্বর রয়েছে। ওই নম্বরে ফোন করা হলে স্বেচ্ছাসেবীরা পণ্য পৌঁছে দেন।

বুধবার হাটে আসা ১০-১২ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে চার-পাঁচ পদের সবজি, তাজা মাছ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন এর আগে ২০১৯ সালেও বিনা মূল্যের হাট বসিয়েছিল। রমজান মাস উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি এবার ভালো মানের খেজুর দিচ্ছে। লকডাউনের কারণে হতদরিদ্র মানুষের আয়–রোজগার কমে গেছে। তাই সংগঠনের সহায়তা তাঁদের খুব কাজে দিচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার ও আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) মো. জুবের আলমসহ অনেকেই এই হাট পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা হাটের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, একটা প্রশংসনীয় কাজ করছে মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন। দরিদ্র মানুষের সহায়তায় অন্যদেরও এভাবে এগিয়ে আসা দরকার।