সিদ্ধিরগঞ্জে র‍্যাব-পুলিশের সঙ্গে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সংঘর্ষ, আহত ২০

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশ-র‍্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আদমজী বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে উপজেলায় আদমজী বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশ ও র‍্যাবের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ সোমবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় হওয়া এ সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে দুই পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ইটপাটকেলের জবাবে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল মেরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে র‍্যাব-পুলিশ। সংঘর্ষের পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার আদমজী জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত আদমজী জামে মসজিদে জুমার নামাজের আগে বক্তব্য দেওয়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় গতকাল রোববার রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ছেড়ে দিতে আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সিদ্দিরগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েক শ নারী-পুরুষ। একপর্যায়ে তাঁরা সড়কের ওপর কাঠের টেবিল, চৌকি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন পোশাককারখানার শ্রমিকেরা। তাঁদের সড়ক থেকে সরে যেতে আহ্বান জানায় পুলিশ। তবে তাঁরা না সরায় পুলিশ ও র‍্যাব একসঙ্গে লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দাবি, ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়—এমন লোকজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযানে যদি নিরপরাধ কেউ আটক হন, তবে তাঁদের ‘আলোচনার মাধ্যমে’ ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সবাইকে ছেড়ে দিতে বলেছে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান তাঁরা। সকাল নয়টার দিকে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এরপর পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে।

পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় বাহিনীটির পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বলেন, শুক্রবার মসজিদে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। ওই মামলায় রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পের ভেতর অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানের সময় অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে পুলিশ। ঘটনার সময় মসজিদে যাননি এবং হামলার সময় যাঁরা ছিলেন না, তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হন। সংঘর্ষে ক্যাম্পের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।।

সংঘর্ষের পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু প্রথম আলোকে বলেন, বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে থানার সামনে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তাঁরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের শতাধিক গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবার আগে সিদ্দিরগঞ্জের আদমজী জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত আদমজী জামে মসজিদে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই আজিজুল হক মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভারতে মহানবী (স.)–কে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে, সে কারণে প্রতিবাদ হচ্ছে। ভারতের বিষয় ভারতে থাক। ভারতের বিষয়ে এখানে আমরা না আনি। প্রতিবাদ করব, কিন্তু যেন বিশৃঙ্খলা না হয়।’ এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর দফায় দফায় হামলা করে তাঁকে রক্তাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২০ থেকে ১২৫ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করে।