সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে, চিন্তিত কৃষক

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবারো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। শুক্রবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ সদরের গুনেরগাঁতী এলাকায়
প্রথম আলো

তিন দিন ধরে অব্যাহতভাবে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জে পানির প্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের যমুনার হার্ড পয়েন্টে পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় তা বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কাজীপুর পয়েন্টেও পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৩ সেন্টিমিটার।

এদিকে দফায় দফায় যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার অভ্যন্তরীণ সব নদ-নদীর পানিও বেড়েছে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের চাষ করা রোপা আমন ধান, সবজি ও নতুন করে বোনা মাষকলাইয়ের খেত। যে কারণে আবারও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে জেলার কৃষকেরা। নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের চোখে–মুখে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ছাপ। কৃষকেরা বলছেন, অসময়ে এমনভাবে দফায় দফায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর হয়তো তাঁদের ফসলের শেষ রক্ষা হবে না।

বেলকুচি উপজেলার রানিপুরা গ্রামের কৃষক আক্কাশ আলী বলেন, ‘দফায় দফায় পানি বাড়ায় আমরা ক্ষতির মধ্যে পড়ছি। এত দীর্ঘ সময় বন্যা গেল, একখান জমিত রোপা আমন ধান লাগাইলাম, সেটাও এবারের পানিত তলায়া গেল। এহুন কেমনে চলমু কে জানে?’

যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও ক্ষতির আশঙ্কায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। বর্তমানে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে আছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চর পাইকপাড়া এলাকার হাসেম আলী জানান, ৩ হাজার টাকা খরচ করে তিনি ২০ শতক জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ শুরু করেছেন। ১০ দিন আগে জমিতে চারা রোপণের কাজ শেষ করেছেন। এখন ওই জমিতে পানি। তিনি বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন (পাউবো) বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ যমুনা হার্ড পয়েন্টে পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া কাজীপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জুন মাসের প্রথম থেকে শুরু হওয়া তিন দফা বন্যায় ইতিমধ্যে কৃষি খাতে প্রায় সোয়া ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকেরা আবারও উঠে দাঁড়াতে রোপা আমন ধান, মাষকলাই, গম, ভুট্টা, সবজিসহ নানা ফসল আবাদ করেন। কিন্তু যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও ক্ষতির আশঙ্কায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। বর্তমানে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে আছে।

পাউবো সিরাজগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বাড়ছে। একই কারণেই জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোর পানিও বাড়ছে। যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও দু-এক দিনের মধ্যে সেটি স্থিতিশীল হতে পারে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।