সিলেটে অধিকাংশ পরীক্ষাকেন্দ্রে বন্যার পানি, এসএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি

সিলেটে বন্যার পানি ক্রমশ বাড়ছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগও নেই। বন্যার পানিতে অসংখ্য পরীক্ষাকেন্দ্র ডুবে যাওয়ায় সেখানে পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ পরিস্থিতিতে আগামী রোববার থেকে অনুষ্ঠেয় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় আবার গত বুধবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুটি জেলার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার নির্ধারিত অসংখ্য কেন্দ্রেও পানি ঢুকে পড়েছে।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীন থাকা চার জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে বন্যাকবলিত জেলা সিলেটে ৪৩ হাজার ৮৪৪ জন ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫২ জন পরীক্ষার্থী আছে।

সিলেট শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের অধীন থাকা চার জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে বন্যাকবলিত জেলা সিলেটে ৪৩ হাজার ৮৪৪ জন ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫২ জন পরীক্ষার্থী আছে। ৪ জেলায় ১৪৯টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৫৯টি ও সুনামগঞ্জে ৩৩টি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। তবে বন্যা পরিস্থিতিতে কী পরিমাণ পরীক্ষাকেন্দ্র প্লাবিত হয়েছে কিংবা কতসংখ্যক পরীক্ষার্থী পানিবন্দী আছে, এ রকম কোনো পরিসংখ্যান শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।

স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বানভাসি এলাকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট নগরসহ জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সিলেট সদর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বেশির ভাগ বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার বেশির ভাগ পরীক্ষাকেন্দ্র বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে রামানুজ গুপ্ত। সে জানায়, তাদের বাসা সিলেট নগরের জামতলা এলাকায়। দুই দিন ধরে তাদের বাসায় হাঁটুপানি। অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে বই ও কাগজপত্র ভিজে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে তারা। ফলে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে সে দুশ্চিন্তায় আছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় পরীক্ষাকেন্দ্র থানা সদর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে এখন হাঁটুপানি। এ ছাড়া উপজেলায় যে কয়টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে, সব কটিতে পানি উঠেছে। উপজেলার ৯০ শতাংশ বাড়িঘরে পানি। এ অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে পরীক্ষা পেছানো উচিত।

বানভাসি এলাকার মানুষজন জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় পানি উঠেছে, সেখানে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এসএসসি পরীক্ষার্থী পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে পরীক্ষার্থীরা কীভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাবে, এ নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

বন্যা পরিস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষা আয়োজনের জন্য শতভাগ প্রস্তুতি বোর্ডের রয়েছে। তবে আমরা বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। পুরো বিষয়টি চেয়ারম্যান মহোদয় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।’