সিলেটে পানিবন্দী এলাকায় ভ্যানের ৫০ টাকার ভাড়া হয়েছে এক হাজার টাকা

ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় বুক সমান পানি। বুক সমান পানি ঠেলে রিকশায় যাতায়াত করছেন মানুষজন। আজ দুপুরে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের সামনেছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটে নগর, শহরতলি ও বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলোতে বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে বাসাবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন মানুষ। এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্গত এলাকাগুলোতে চলাচলের মাধ্যম রিকশা ও ভ্যানের বাড়তি ভাড়া।

যেসব এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৫০ টাকার ভাড়া ছিল, ওই দূরত্ব যেতে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করছেন চালকেরা। এ ছাড়া নৌকাতেও অধিক ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকায় দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। ওই এলাকায় উপশহরের মোড় থেকে কিছু দূর এগোলেই ১০০ থেকে ২০০ টাকা দাবি করছেন চালকেরা। তবে আরও কিছু দূর এগোলে সেটি ৫০০ টাকা থেকে হাজার টাকায় পৌঁছাচ্ছে। পানির মধ্যে বাধ্য হয়ে যাত্রীরাও সে ভাড়াই দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বন্যার পানিতে ডুবেছে ঘরবাড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য শহর ছাড়ছেন মানুষজন। আজ সিলেট নগরের কদমতলি বাস টার্মিনাল এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

শাহজালাল উপশহর এলাকায় যাতায়াত করা যাত্রীরা বলেন, এক কিলোমিটারের সড়কে ভ্যানচালকেরা দুজনের ভাড়া এক হাজার টাকা দাবি করছেন। রিকশায় আরেকটু কম। রিকশার চালকেরা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাবি করেন। তবে মালামাল আনা-নেওয়া করতে এবং বন্যার পানির কারণে ভ্যানেই বেশি আসা–যাওয়া করেন যাত্রীরা। এতে সুযোগ বুঝে ভ্যানচালকেরা বেশি টাকা দাবি করছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও পাওয়া যায়। কিছু ভ্যানচালক নিজেরা ভাড়ার টাকা দাবি করেন না। তাঁরা যাত্রীদের যা মন চায় দিতে বলেন।

আরও পড়ুন

সরেজমিনে আজ সকালে শাহজালাল উপশহর মোড়ে দেখা যায়, সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল পাঁচটি ভ্যান। এ সময় ভ্যানচালকদের সঙ্গে দামাদামি করতে দেখা যায় যাত্রীদের। কিছু সময় পরপর কয়েকটি ভ্যান ও রিকশা ভেতর থেকে মূল সড়ক দিয়ে বের হতে দেখা যায়। প্রবল বৃষ্টিতে রিকশার আসনে পা তুলে বসে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের। আবার কোনো যাত্রীকে ভ্যানের ওপর প্লাস্টিকের ঝুড়িতে বসতে দেখা গেছে।

বন্যার পানিতে ডুবেছে ঘরবাড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য শহর ছাড়ছেন মানুষজন। আজ সিলেট নগরের কদমতলি বাস টার্মিনাল এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

সাজ্জাদ হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘নিচতলায় বাসা হওয়ায় ঘরে কোমরসমান পানি উঠেছে। মালামাল অনেক কষ্টে খাট-পালঙ্কের ওপর তুলে রেখেছি। শনিবার সকাল আটটার দিকে পানি আরও বেড়ে যাওয়ায় ঘরের স্ত্রী-সন্তানদের স্বজনের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আবার বাসায় ফেরার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘ভ্যানে সকালে তিনজন শাহজালাল উপশহরের জে-ব্লক থেকে মূল সড়কে এসেছি। সঙ্গে দুটি ব্যাগ ছিল। স্ত্রী-সন্তানকে ভ্যানে প্লাস্টিকের মোড়ায় বসিয়ে নিজে অনেক পথ ভ্যান ঠেলে এসেছি। প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দেওয়ার জন্য ভ্যানচালককে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’

ভ্যান নিয়ে উপশহর মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমার নিজের ঘরেও বুকসমান পানি। পেটের দায়ে বৃষ্টিতে এবং বন্যার পানি ঠেলে নেমেছি। এমন পরিস্থিতি না হলে এ পানিতে কোনোভাবেই ভ্যান নিয়ে আসতাম না।’ তিনি দাবি করেন, ‘যাত্রীদের বলি কিছু টাকা বাড়িয়ে দিতে। তবে সেটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নয়।’