সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি, তবে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফেরা শুরু হয়নি

সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক। পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে সড়কের একপাশ। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ছবিটি সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের ফুলচান্দ এলাকা থেকে তোলাছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মানুষের ঘরে ফেরা শুরু হয়নি। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটে বৃষ্টি হয়নি। দুপুর থেকে রোদের দেখাও মিলেছে। তবে জেলায় দুটি নদীর পানি দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে থাকলেও অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। আজ সকাল ৬টায় সেখানে পানি ১৩ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল। নদীর সিলেট পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, আজ সকাল ছয়টায় সেখানে পানি ছিল ১১ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, আজ সকাল ৬টায় সেখানে আগের দিনের চেয়ে পানি কিছুটা কমে ১৭ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার হয়েছে। নদীর শেওলান পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার, আজ সকালে সেখানে পানি অবস্থান করছে ১৩ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটারে। কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি কিছুটা বেড়েছে। আর কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। সেখানে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল ১০ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার। আজ সকালেও পানির অবস্থান অপরিবর্তিত আছে।

গত বুধবার থেকে সিলেট নগরে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে নগরসহ আশপাশের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র এবং নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য স্বজনদের বাসাবাড়িতে অবস্থান করে।

আজ নগরের ১৫টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে গতকাল পর্যন্ত পানি বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও সড়কে অবস্থান করছিল, এর বেশ কিছু এলাকায় পানি নেমে গেছে। নগরের তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, লামাবাজার, কুয়ারপাড়, লালদিঘিরপাড়, শিবগঞ্জ, তেররতন, শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি নেমেছে। তবে নগরের বাসিন্দারা সুপেয় পানির সংকটে আছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা ট্যাংক বিভিন্ন পাড়া–মহল্লার সামনে এবং আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি কিছুটা নামলেও সেখানে নৌকা চলাচল করছে। আবার পানি কমে যাওয়ায় অনেকে নৌকাগুলো ট্রাকে করে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা দবির আহমদ বলেন, ‘পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো সড়কে পানি আছে। বৃষ্টি থামলে আশা করছি পরিস্থিতি আরও কিছুটা উন্নতি হবে।’

শাহজালাল উপশহর এলাকায় নৌকা ট্রাকে তুলে বাঁধছিলেন নাজির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বন্যার কারণে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে তিনটি নৌকা নিয়ে এসেছিলেন। এখন পানি কমে যাওয়ায় সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে পানি বেড়ে গেলে আবার নৌকা নিয়ে আসবেন। নৌকাগুলো দিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষ সরিয়ে নেওয়া এবং খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। নগরের মির্জাজাঙ্গাল ও দাড়িয়াপাড়ায়ও পানি কিছুটা কমেছে। তবে ছড়াসংলগ্ন বাসাবাড়িগুলোয় পানি এখনো রয়ে গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে। সেগুলোয় বন্যাদুর্গত প্রায় সাত হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের পাম্পগুলো বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পানি সরবরাহের ভ্রাম্যমাণ ট্যাংকের মাধ্যমে নগরের বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।