সিসিকের অভিযানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, ব্যবসায়ী নেতা কারাগারে
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের নামে লুটপাট হচ্ছে বলে দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন নগরীর বৃহত্তর মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিক। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তরের কর্মকর্তা। গতকাল বুধবার রাতে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানা-পুলিশের একটি দল মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে মো. আতিককে গ্রেপ্তার করেছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হুদা খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ নম্বর ধারায় করা হয়েছে। একমাত্র আসামি করা হয়েছে মো. আতিককে। বুধবার রাতে আটকের পর তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার আতিক মহানগর যুবলীগের একজন কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে লকডাউনে খুদে ব্যবসায়ীদের পসরা সাজিয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নগরীর পশ্চিম-উত্তর দিকের অন্যতম জমজমাট এলাকা হচ্ছে মদিনা মার্কেট মোড়। সেখানে লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তার পাশে অস্থায়ী হাট বসেছিল। এ খবর পেয়ে ৪ জুলাই সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও স্থানীয় দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান, ইলিয়াছুর রহমানকে নিয়ে অভিযান চালান। এ সময় সিসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায় পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে সবাইকে সতর্ক করে দেন। এ অভিযানের দিন রাত প্রায় ১১টায় মো. আতিক তাঁর ফেসবুক আইডিতে ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে অভিযান পরিচালনাকারীদের ‘মেয়রের গুন্ডা বাহিনী’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গতকাল বুধবার রাতে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানা-পুলিশের একটি দল মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে মো. আতিককে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তরের কর্মকর্তা আলিম শাহ প্রথম আলোকে বলেন, মো. আতিক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিয়ে অপপ্রচার ও ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেন। ওই স্ট্যাটাসের পাশাপাশি তিনি আরও কয়েকটি স্ট্যাটাস ও নানা রকম ছবি-ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। দুই দিন ধরে এ তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
মো. আতিকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘অভিযানের নামে লুটপাট’ শিরোনামে তাঁর লেখা একটি দীর্ঘ পোস্ট দেখা গেছে। সেখানে অভিযানের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ স্ট্যাটাস ও ছবি ৬৯ জন শেয়ার করেছেন। শতাধিক মন্তব্য করে আতিকের স্ট্যাটাসের সঙ্গে সহমত পোষণ করতেও দেখা গেছে। স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘এই মদিনা মার্কেট গরিব খুদে ব্যবসায়ীদের ওপর আইতে অভিযান, যাইতে অভিযান, বইতে-উঠতে অভিযান, গরিব মানুষদেরকে ভাতে মারছিস...একবার গরিবের কাতারে লাইনে দাঁড়িয়ে দেখ, তর পরিণতি-অনুভূতিটা কেমন।’
মদিনা মার্কেট এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, লকডাউন চলাকালে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে ভ্রাম্যমাণ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলছিল। এসব অস্থায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে কিছু লোক মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নামে প্রতিদিন চাঁদা তুলতেন। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বৃহত্তর মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে। এ চাঁদা উত্তোলনের কাজ সদলবল আতিক করতেন। এ জন্য সিটি করপোরেশনের অভিযানের পর মো. আতিক ফেসবুকে তাৎক্ষণিক এ প্রতিক্রিয়া দেখান।
তবে এ ব্যাপারে বৃহত্তর মাদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমির হোসেন কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ফেসবুকে মো. আতিকের স্ট্যাটাস ব্যক্তিগত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’