সীতাকুণ্ডে টানা ভারী বর্ষণে পানিবন্দী সহস্রাধিক পরিবার

ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। সোমবার সকালে উপজেলার সুলতানা মন্দির দত্তপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। টানা ভারী বর্ষণে সীতাকুণ্ড পৌরসভা, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের বেশির ভাগেরই ঘরের মেঝেতে পানি উঠেছে। মূলত, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের হাজীপাড়া, কুমিরা ইউনিয়নের দত্তপাড়া ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বারআউলিয়া এলাকায় দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকার বেশির ভাগ ঘরের মেঝেতে পানি উঠেছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট ডুবে চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেককে ডুবে যাওয়া সড়কের ওপর জাল ফেলে মাছ ধরতে দেখা যায়। সোনাইছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে ডুবে আছে। শিক্ষার্থীদের হাঁটুপানি মাড়িয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে হয়েছে। মাছের শতাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে।

উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেননি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতির হিসাব দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

কুমিরার দত্তপাড়া দুর্গামন্দিরের দক্ষিণ পাশে ঘরের ভেতর জমা পানি নিষ্কাশন করছিলেন বিদুর দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাতভর মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁদের ঘরে পানি ঢুকতে থাকে। একপর্যায়ে ঘরের ভেতর হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। ঘরের আসবাবগুলো খাটের ওপর তুলে সেখানে তাঁরা অবস্থান নেন। সকালে বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি নামতে থাকে। সারা দিনে পানি নিষ্কাশন সম্ভব হবে কি না, সন্দেহ তাঁর।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের পানিবন্দী এলাকা পরিদর্শনে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী। সোমবার দুপুরে ওই ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দুপুর ১২টার দিকে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী ওই ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের পানিবন্দী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

মোরশেদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির, মগপুকুর ও কোর্টপাড়া এলাকায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। বেশির ভাগ পরিবারের রান্নাঘরের চুলা জ্বলেনি। এলাকা পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর পাঠাবেন তিনি।

বাঁশবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকায় অন্তত ১০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছে। মূলত, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন

সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছে। ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশিত না হওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়িতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সোমবার সুলতানা মন্দির দত্তপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সোনাইছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, তাঁদের বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে একটি ট্রাক ডিপো তৈরি হওয়ার পর প্রতিবছর বর্ষায় বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হন। ডিপো কর্তৃপক্ষকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হলেও তারা কর্ণপাত করছে না। বাধ্য হয়ে তিনি প্রধান শিক্ষককে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনওর কাছে পাঠিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, বরবটি, শিম, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজির খেত আছে। যদি বেশি দিন পানি আটকে থাকে, তাহলে সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।

ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, কত পরিবার পানিবন্দী হয়েছে, সে হিসাব এখনো তিনি পাননি। জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি বেশি সময় স্থায়ী হবে না বলে তাঁর ধারণা।