সীমিত আয়ে দিন যাচ্ছে না চাকরিজীবীদের

খরচ সামলাতে কম কম করে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। বাদ দিয়েছেন বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না করা।

রংপুরে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। চাকরিজীবী বা সীমিত আয়ের মানুষেরা খরচ পোষাতে আগের তুলনায় অনেকে অর্ধেক পরিমাণে পণ্য কিনছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজন চাকরি করেন, এমন পরিবারেও চলছে টানাটানি। অনেকে খরচ কমাতে বাড়িতে এখন ভালোমন্দ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

নগরের সিটি বাজারে গত বুধবার কেনাকাটা করতে যান নগরের রাধাবল্লভ এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী একরামুল হক। পণ্যের দাম শুনে তাঁর হতাশা বেড়ে গেল। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। সামান্য বেতনের টাকায় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই আগের তুলনায় এখন বাজার অনেকটা কমিয়ে দিয়ে অর্ধেকে নিয়ে এসেছি। তা না হলে কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছি না। এখন আর শখের খাবারও হয়তো জুটবে না।’

নগরের সবচেয়ে বড় বাজার হলো সিটি বাজার। যেখানে প্রতিদিন মানুষজন ছুটে যান সব ধরনের নিত্যপণ্য কিনতে। এই বাজারে গতকাল বৃহস্পতি ও গত বুধবার দুই দিন সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজার করতে আসা মানুষজনের মুখে একটাই কথা, ‘জিনিসপত্রের এত দাম’।

নগরের কেরানীপাড়ার বাসিন্দা মাসুদা আক্তার গত বুধবার বিকেলে সিটি বাজারে আসেন। কর্মস্থল থেকে দিন শেষে বাড়ি ফেরার আগে বাজারে এসেছেন। একটি মুদিদোকানে তাঁর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, সপ্তাহে তিন হাজার টাকার মধ্যে যে পণ্য কিনতেন, সেই পণ্য এখন কিনতে লাগছে সাড়ে চার হাজার টাকা। দেড় হাজার টাকা বেশি। এ অবস্থায় ওই আগের (তিন হাজার) টাকার মধ্যেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। কিন্তু পণ্য কেনার পরিমাণ অনেক কমে গেল। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন। তারপরও তাঁদের এ অবস্থা।

মুদিদোকান মিজান স্টোরের মালিক ইসাহাক আলী বলেন, যে ক্রেতা চিনি পাঁচ কেজি কিনেছিলেন, এখন তিনি দুই কেজি কিনছেন। ওই ক্রেতা পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল কমিয়ে দুই লিটার কিনছেন। প্রতিটি পণ্যই কম কম করে কিনছেন ক্রেতারা।

সিটি বাজারে ছোট-বড় মাছ, মুরগি, মাংস, সবজিসহ নানা ধরনের পণ্যের দোকান রয়েছে দুই হাজারের বেশি। এসব দোকানের সামনে গত দুই দিন তেমন ভিড় দেখা যায়নি। কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। নগরের হনুমানতলা এলাকার বাসিন্দা আবু আসলাম চাকরি করেন। তিনি মাছের বাজারে দরদাম যাচাই করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট চাকরি করা লোকজনের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। কী মাছ কিনব, তা সিদ্ধান্ত নিতেই পারছি না। এক সপ্তাহ আগে বাজার করেছি যে টাকায়, সেই টাকায় এখন আর বাজার হচ্ছে না।’

সিটি বাজারের মুদিদোকান হারুন স্টোরসের মালিক হারুন-অর রশিদ বলেন, তাঁর দোকানে প্রতিদিন চিনি, আটা, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্য কিনতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। এখন সেই ভিড় অনেকটা কমে গেছে। বিক্রিও কমেছে। তিনি বললেন, ‘আমার মাসিক কিছু ক্রেতা আছে, যাঁরা প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার কেনাকাটা করতেন। তাঁরা এখন এই টাকা কমিয়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে কেনাকাটা করে মাস পার করছেন। ’

এই দোকানে কেনাকাটা করতে আসা ধাপ এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আরমান আলী বলেন, ‘এই কয়েক দিন আগেও চিনি পাঁচ কেজি, তেল পাঁচ লিটার ও ডাল তিন কেজি কিনতাম। এখন এসব পণ্য অর্ধেক কিনছি। উপায় না পেয়ে শেষমেশ সংসারের খরচ কমিয়ে দিয়েছি।’

বেড়েছে চালের দাম

রংপুরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে বিআর-২৮ চাল বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা। সেই চাল গতকাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। বিআর-২৯ (৫০ কেজি) ২ হাজার ৪০০ টাকার বস্তা ২০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা। গুটি স্বর্ণা চালের বস্তা ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা, মিনিকেট ৩ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ টাকা হয়েছে। আর মোটা হাইব্রিড ১ হাজার ৮০০ টাকার বস্তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ টাকা।