সুনামগঞ্জে বন্যায় সড়ক প্লাবিত হয়ে দুই উপজেলা বিচ্ছিন্ন

বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় সুনামগঞ্জের ছাতক- সিলেট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। ছবিটি ছাতক শহরের পেপারমিল এলাকা থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে তোলাছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে জেলার পাঁচটি উপজেলা। এর মধ্যে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এসব উপজেলায় হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় ছাতকের সঙ্গে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একইভাবে জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুরের উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাতক শহর থেকে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে সিলেট যাতায়াত করেন ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষ। কিন্তু বন্যার পানিতে কয়েকটি স্থান তলিয়ে যাওয়ায় ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

একইভাবে জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা, আনোয়ারপুর, বালিজুরীসহ আরও কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। মানুষজন জরুরি প্রয়োজনে নৌকায় প্লাবিত স্থান পার হয়ে পরে গাড়িতে চলাচল করছেন।
এদিকে সুরমা নদীর পানি তীর উপচে সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ছাতক উপজেলায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিনটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ৭০টি পরিবার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১০২ মিলিমিটার। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান জানান, ছাতক পৌর শহরসহ আটটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরের পুরোটাই প্লাবিত। ইতিমধ্যে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ জানিয়েছেন, তাঁর উপজেলায় সদর ও সুরমা ইউনিয়ন বেশি বন্যাকবলিত। যাঁদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে, তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এক সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে। এতে করে জেলার সদর, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও তাহিরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর তীর উপচে শহরের মধ্যবাজার, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, সাহেববাড়ি, নবীনগর, বড়পাড়া, জলিলপুর ও মল্লিকপুর এলাকায় পানি ঢুকেছে। একইভাবে ছাতক পৌর শহরে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করায় পুরো ছাতক শহর বন্যাকবলিত।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র খুলতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।