সুন্দরবন থেকে এবার ১৫ দিন আগেই শুরু হবে মধু সংগ্রহ

  • ২০২১ সালের মধু ও মোম আহরণের জন্য ৬ হাজার ৭৯৭ জন মৌয়াল সুন্দরবনে যান।

  • ওই সালে মৌয়ালেরা ৩৭৬ দশমিক ৯০ টন মধু ও ১১৩ দশমিক শূন্য ৯ টন মোম আহরণ করেন।

  • ওই সালে মধু থেকে ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৩ টাকা ও মোম থেকে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ টাকার রাজস্ব আসে।

এবার সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হচ্ছে মধু সংগ্রহ। আগের বছরগুলোতে ১ এপ্রিল শুরু হলেও এবার ১৫ দিন এগিয়ে এনে মধু সংগ্রহ শুরু হবে ১৫ মার্চ।

মৌয়ালেরা বলেন, জেলেরা চুরি করে সুন্দরবনের বিখ্যাত মধু খলিশা ফুলের মধু আগেভাগে কেটে নেয়, এমন ভাবনা থেকে
চলতি বছর মধু সংগ্রহের শুরুর দিন ১৫ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে।

সুন্দরবন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনে সবচেয়ে ভালো মানের মধু পাওয়া যায় খলিশা ফুল থেকে। মানের দিক থেকে এর পরেই গরান ও গর্জন ফুলের মধু। মৌসুমের একেবারে শেষে আসে কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু। স্বাদের দিক থেকে কেওড়া ও গেওয়া ফুলের কম সুস্বাদু। বিশ্বজুড়ে সুন্দরবনের মধুর কদর আছে। সুন্দরবনের মধু বিশেষ করে খলিশা ফুলের মধু বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

সুন্দরবন থেকে আগে ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ শুরু হতো। জেলেরা মধু চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় ও খলিশা ফুল আগে আসায় মধু সংগ্রহের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে।

১৮৮৬ সাল থেকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অনুষ্ঠান করে প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ শুরু হয়। সুন্দরবন থেকে যাঁরা মধু সংগ্রহ করেন, তাঁদের মৌয়াল বলে।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় সুন্দরবন অবস্থিত হলেও মূলত মধু পাওয়া যায় সাতক্ষীরা রেঞ্জে। এ জন্য প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ শুরু হয়ে চলত ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০২১ সালের মধু ও মোম আহরণের জন্য ১ হাজার ১২টি অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়। এসব অনুমতিপত্রের বিপরীতে ৬ হাজার ৭৯৭ জন মৌয়াল সুন্দরবনে যান। তাঁরা ৩ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯০ টন মধু ও ১১৩ দশমিক শূন্য ৯ টন মোম আহরণ করেন। আর মধু থেকে ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৩ টাকা ও মোম থেকে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ টাকা রাজস্ব আসে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, মূলত মৌয়ালদের অভিযোগ ও বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মধু সংগ্রহের সময় ১৫ দিন এগিয়ে ১৫ মার্চ করা হয়েছে। দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খলিশা ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জেলেরা মধু চুরি করে নিয়ে যান। ফলে মৌয়ালরা অনুমতি নিয়ে প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে পারেন না।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে খলিশা ফুল আগে আসছে। ফলে মধুও আগে পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও এটা হতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে মধু সংগ্রহ শুরুর তারিখ ১৫ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে।