সুপেয় পানির সংকটে তিন ইউনিয়নের মানুষ

গৃহস্থলির কাজে পুকুরের ময়লা পানি ব্যবহার করছেন এক নারী। সম্প্রতি কাঁঠালিয়া উপজেলার নেয়ামতপুরা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

নলকূপে নোনা পানি ওঠে। পুকুর পাড়ে পানির ফিল্টার (পিএসএফ) অকেজো হয়ে রয়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে অনেকে পানি ধরে রাখেন বড় ট্যাংকে। সেই পানি শেষ হয়ে গেলে শুরু হয় সুপেয় পানির সংকট। গরিব মানুষ তখন পুকুর ও ডোবার পানিতে ফিটকিরি অথবা ওষুধ দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করেন। রান্না, থালাবাসন ধোয়া, গোসলসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে হয় নোনা পানিতে। দুর্ভোগের এই চিত্র ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার তিন ইউনিয়নের।

উপজেলার পাটিখালঘাটা, চেঁচরিরামপুর ও আমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রায় ৬০ হাজার মানুষ সুপেয় পানির সংকটে। বছরের পর বছর তাঁরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তাঁদের পানিবাহিত রোগব্যাধি লেগেই থাকে। এ পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিনটি ইউনিয়নে অগভীর নলকূপ আছে ৯৬টি, এর মধ্যে অকেজো ৮টি। আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে পুকুর পাড়ে পানির ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন করা হয়েছে ১৭২টি। এগুলোর প্রায় সবই অকেজো। পরে লবণাক্ত দূরীকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয় ৪টি। এগুলোও নষ্টের পথে।

সম্প্রতি পাটিখালঘাটা ও আমুয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নারীরা গৃহস্থালি কাজের জন্য বদ্ধ পুকুরের ময়লা পানি ব্যবহার করছেন। সরকারিভাবে পুকুর পাড়ে স্থাপন করা পিএসএফ নষ্ট। অনেকে পুকুর থেকে খাওয়ার পানি নিচ্ছেন। এই পানি বিশুদ্ধ করে তাঁরা খাবেন।

পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের নেয়ামতপুরা গ্রামের কৃষক সুলতান হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে গভীর নলকূপ বসানো যাচ্ছে না। দুই-একটি বসানো গেলেও তাতে নোনা পানি ওঠে। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা পান করি। এই পানি শেষ হয়ে গেলে পুকুর ও ডোবার পানি ফিটকিরি অথবা বিশুদ্ধকরণ ওষুধ দিয়ে ব্যবহার করি।’

আমুয়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘সারা জীবনই বৃষ্টির পানি অথবা পুকুরের পানি পান করেছি। গোসল ও রান্নার কাজ সারতে হয় একই পুকুরের পানি দিয়ে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পুকুর শুকিয়ে যায়। তখন পানির সংকট তীব্র হয়।’

চেঁচরিরামপুর ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখনো বৃষ্টির পানি পান করছে, কেউ আবার পুকুর ও ডোবার পানির ওপরই নির্ভরশীল। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমরা সরকারের উচ্চমহলে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি, যাতে মানুষ সুপেয় পানি পায়।’

পাটিখালঘাটা ইউপির চেয়ারম্যান শিশির দাস বলেন, ‘প্রতি ওয়ার্ডে দুটি করে পিএসএফ স্থাপন করা হলে জনগণের পানির সমস্যা দূর হবে।’

উপজেলা প্রকৌশলী এইচ এম সাইফুর রহমান বলেন, কাঁঠালিয়ার ওই তিনটি ইউনিয়নে চলতি অর্থবছরে ১৮টি সোলার পিএসএফ ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য চারটি পানি ট্যাংক দেওয়া হয়েছে। আরও বেশি লবণাক্ত দূরীকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।