সুলতানার স্কুলে আলোকিত রোকনপুর

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের ঝরে পড়া রোধে নিজ খরচে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন সুলতানা আফরোজ।

সুলতানা আফরোজ

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন সুলতানা আফরোজ (৭০)। সেখান থেকে ২০১৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর ২০১৭ সালে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। পরিবেশ ও নিয়মশৃঙ্খলার কারণে আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির সুনাম।

সুলতানা আফরোজের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম রোকনপুরে। এর আগে ১৮৯০ সালে এ গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর দাদা মিয়া বক্স মাস্টার। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের ঝরে পড়া রোধে নিজ খরচে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন সুলতানা আফরোজ। একই সঙ্গে গ্রামের মানুষের জ্ঞানচর্চার জন্য বিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি পাঠাগারও গড়ে তুলেছেন তিনি।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, একটি বিদ্যালয় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আরেকটি বিদ্যালয় স্থাপন করা যায়। রোকনপুর গ্রামটি নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এ গ্রাম থেকে সবচেয়ে কাছের মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রায় চার কিলোমিটার দূরে একই ইউনিয়নের কুমারুলী বাজারের কাছে অবস্থিত। নাম কুমারুলী উচ্চবিদ্যালয়।

রোকনপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রোকনপুর, বিজয়পুর, ফতেহপুর, পানানের একাংশসহ নান্দাইল উপজেলার রসুলপুর ও কাঁঠালভাঙা গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমেছে। রসুলপুর গ্রামের মো. ফজল মিয়া (৬৫) বলেন, পড়ালেখার জন্য গ্রামের ছেলেমেয়েদের কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুমারুলী উচ্চবিদ্যালয়ে যেতে হতো। এখন তাদের এ কষ্ট লাঘব হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে রয়েছে সুপরিসর শ্রেণিকক্ষসহ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও টিফিনের জন্য আলাদা কক্ষ। পাশাপাশি রয়েছে নামাজ পড়ার স্থান ও আইসোলেশন কক্ষ। রয়েছে সুপরিসর মিলনায়তন, যেখানে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সমকালীন নানা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মিলনায়তনের প্রবেশপথে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।

সুলতানা আফরোজের বাবা ড. আবদুল আজিজ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (আইআর) প্রধান। সুলতানাও একই বিভাগ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজে শিক্ষকতা শুরু করেন। ২৬ বছর শিক্ষকতা শেষে ২০১৩ সালে ফেরেন দেশে।

রোকনপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা আফরোজ নিঃসন্তান। তাঁর স্বামী থাকেন লন্ডনে। সুলতানা আফরোজ বলেন, তিনি মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন। তখন চার-পাঁচটি গ্রামের অনেক শিক্ষার্থীকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর ঝরে পড়তে দেখেছেন। আবার কেউ কেউ পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার জন্য দূরের বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হতো। এসব দেখে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। নিজের টাকায় পাকা ভবনসহ অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন। গ্রামের নানা বয়সের মানুষের জ্ঞানচর্চার জন্য গড়ে তুলেছেন পাঠাগার।