সুলভে আম যায় ‘ম্যাঙ্গো ট্রেনে’

■ ম্যাঙ্গো ট্রেন চালু হয় ২৭ মে।

■ ১৩ দিনে ঢাকায় ৬৫০ টন আম।

■ বড় ব্যবসায়ীদের কাজে লাগছে না।

বুক করা আম ঢাকায় পাঠানোর জন্য ট্রেনে তোলা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম পরিবহনে এ বছর ভালো সাড়া ফেলেছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। এই ট্রেনের পাঁচটি পণ্যবাহী বগি বা ওয়াগনে প্রতিদিন প্রায় ৭৫ টন আম পরিবহন করা হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ আরও দুটি ওয়াগন বাড়ানোর চিন্তা করছে।

যাঁরা এই ট্রেনে আম পাঠান, তাঁরা বলছেন, ট্রেনে আম পাঠাতে ব্যয় অনেক কম। ১০০ কেজি আম কুরিয়ারে পাঠাতে খরচ প্রায় দেড় হাজার টাকা। ট্রেনে খরচ পড়ে ১৩৫ টাকার মতো। পাশাপাশি আম নষ্ট হওয়ার অভিযোগও কম।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ গত ২৭ মে উদ্বোধন করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত প্রতিদিন চলাচল করছে এই ট্রেন। আমের মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেলওয়ের এই সেবা চলবে। উদ্বোধনের পর ট্রেনটি গত ১৩ দিনে প্রায় ৬৫০ মেট্রিক টন আম পরিবহন করেছে। তবে এ সেবা বড় ব্যবসায়ীদের কাজে লাগছে না।

১০০ কেজি আম পরিবহনে কুরিয়ারে ব্যয় দেড় হাজার টাকা। ‘ম্যাঙ্গো ট্রেনে’ খরচ মাত্র ১৩৫ টাকা

রাজশাহী থেকে অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন সওদাগর অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক আরাফাত রুবেল। তিনি প্রথম আলোকে জানান, তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার কেজি আম ট্রেনে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। খরচ যেমন কম, তেমনি আম নষ্ট হচ্ছে না। তিনি বলেন, কুরিয়ারে চাপাচাপি করে নেওয়ার কারণে বেশি দামি কার্টনে আম দিতে হয়। এতে খরচ আরও বেশি পড়ে। ক্রেতাদের সুবিধা বুঝিয়ে বলতে পারলে তাঁরাও ট্রেনে আম নিতে উৎসাহী হন।

এই বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছিল গত বছর। উদ্দেশ্য ছিল স্বল্প খরচে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে আম ও সবজিজাতীয় পণ্য পরিবহন করা। রেলওয়ে জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় ট্রেনটি ছাড়ে। রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছায় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ৫টা ৫০ মিনিটে। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায় রাত দুইটায়। আম নামিয়ে রাতেই ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।

রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম ১ টাকা ৩১ পয়সা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১ টাকা ১৭ পয়সা ভাড়ায় পরিবহন করা হয়। তবে প্রতি ২০ কেজি আমের জন্য ১০ টাকা করে কুলি খরচ নেওয়া হয়। আমের পরিমাণ যা-ই হোক, সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৫ টাকা। এই ট্রেন মালামাল তোলা ও নামানোর জন্য মোট ১৯ স্টেশনে থামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আমনুরা, রহনপুর, কাকন, রাজশাহী, হরিয়ান, সরদহ, আড়ানী, আবদুলপুর, লোকমানপুর ও আজিমনগর স্টেশন থেকে আম বুকিং দেওয়া যায়। নামানো শুরু হয় টাঙ্গাইল স্টেশন থেকে। তারপর মির্জাপুর, জয়দেবপুর, তেজগাঁও, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট ও সব শেষে ঢাকায় আম নামানো হয়। নির্ধারিত স্টেশনগুলোর জন্য ওয়াগনে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া থাকে। বরাদ্দের বেশি আম এলে সেটি ফেরত দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) নাসির উদ্দিন জানান, প্রতিটি ওয়াগনের ধারণক্ষমতা ৪৩ টন করে। তবে ধারণক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করে আম নিলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে একেকটি ওয়াগনে ১৫ টনের মতো আম নেওয়া হয়।

রাজশাহী রেলস্টেশনে গতকাল বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, আম বুকিং নেওয়ার ব্যস্ততা চলছে। সেখানে আম পাঠানোর নিয়ম জানতে এসেছিলেন রাজশাহীর মোহনপুরের বাসিন্দা শামসুদ্দিন সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ৬০০ টাকা খরচ করে কুরিয়ারে ঢাকায় ছেলের কাছে ৪০ কেজি আম পাঠিয়েছিলেন। বারবার ফোন করে চার দিন পর ছেলে আম পেয়েছে। ট্রেনের খবর নিয়ে তিনি খুশি। বললেন, ‘আম যাচ্ছে দিনের দিন। আর ৪০ কেজিতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৭০ টাকা।’

রাজশাহী রেলস্টেশনে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা আম বুকিং নেওয়া হয়। তবে শেষ সময়ে যাঁরা নিয়ে আসেন, তাঁদের আম ট্রেনে তোলা সম্ভব হয় না। রাজশাহী স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম জানান, যাঁদের আম ওঠানো যায় না, তাঁদের বুঝিয়ে পরের দিনের জন্য বুকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া ভাড়া কেজি প্রতি এক টাকা বেশি দিলে পরের দিন সকালে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেসে আম পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

রেলওয়ে জানায়, গত বছর মৌসুমজুড়ে আম পরিবহন করে তাদের আয় হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এবার শুরুর ১৩ দিনে আয় হয়েছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।