সুস্থ হয়ে মুক্ত আকাশে উড়ল তিনটি হিমালয়ান শকুন

মুক্তি পেয়ে ওড়ার আগে একটি হিমালয়ান শকুন। আজ দুপুরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকীছড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

সুস্থ হয়ে ওঠায় তিনটি হিমালয়ান শকুনকে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকীছড়া এলাকায় শকুনগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দুই মাস আগে অসুস্থ অবস্থায় তিনটি শকুনকে উদ্ধার করে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে জানকীছড়া রেসকিউ সেন্টারে রাখা হয়।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের দেওরাছড়া থেকে, ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে ও ৬ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের রেমা থেকে শকুন তিনটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এরপর তাঁদের কর্মীদের খবর দেওয়া হলে শকুনগুলোকে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। এ সময় শকুন তিনটি অসুস্থ ও অত্যন্ত দুর্বল ছিল। এরপর এগুলোকে জানকীছড়া রেসকিউ সেন্টারে রেখে সেবা-শুশ্রূষা দেওয়া হয়। এক দিন পরপর প্রতিটি শকুনকে আধা কেজি করে গরুর মাংস খাওয়ানো হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে তারা সুস্থ-সবল হয়ে ওঠে। মঙ্গল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জানকীছড়ায় তাদের মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিমালয়ান গ্রিফন শকুনের আবাস হিমালয়-সংলগ্ন নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান এলাকায়। শীতের সময় বরফে আচ্ছাদিত এলাকা থেকে আমাদের দেশের দিকে আসে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের আসা চলতে থাকে। গরম পড়লে চলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে ওড়ার কারণে একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে মাটিতে পড়ে যায় শকুন তিনটি। ছাড়া পেয়ে ওরা খোলা আকাশে উড়ে গেছে। আশা করছি শিগগিরই শকুন তিনটি হিমালয় অঞ্চলে ফিরে যাবে।’

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন শকুনকে মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। শকুনমাত্রই এখন বিপন্ন। এ ধরনের শকুন আমাদের দেশে নেই। বিশ্বে বিপদাপন্ন।

পরিবেশবিদেরা বহু আগেই শকুনকে প্রকৃতির “পরিচ্ছন্নতাকর্মী” বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে শকুন। অন্তত ৪০টি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষা করে এই পাখি। মৃতদেহ থেকে যেসব জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে, তা থেকে মানুষকে রক্ষা করে শকুন। এখন শকুনও কমে গেছে, একই সঙ্গে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার হারও বেড়ে গেছে।’