সোনার নাকফুল-আংটিতে আগ্রহ

দাম বেশি, তাই শুধু শৌখিন ক্রেতারাই ঢুঁ মারছেন সোনার দোকানে। নারীদের অনেকে সোনার নাকফুল ও আংটি ঈদের কেনাকাটার তালিকায় রেখেছেন। ছোট কানের দুল আর লকেটের প্রতিও ঝোঁক আছে কারও কারও। অনেকে পুরোনো সোনার গয়না ভেঙে নতুন নকশার গয়না বানাতে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরের কয়েকটি বিপণিবিতান ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা যায়।
একটা সময়ে শুধু বিবাহিত নারীরা নাকফুল ব্যবহার করতেন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে নাকফুল এখন ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ। সোনার নাকফুলের দাম হাতের নাগালে থাকায় এর বিকল্প সেভাবে তৈরি হয়নি। ছোট এক পাথরের নাকফুলই তরুণীদের বেশি প্রিয় বলে জানালেন সোনার দোকানের বিক্রেতারা।
নগরের মিমি সুপার মার্কেটে নাকফুল আর আংটি কিনতে এসেছিলেন পূর্ব মাদারবাড়ীর বাসিন্দা শাহজাদি চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সোনার গয়না আমার খুব পছন্দের। কিন্তু যা দাম! ঈদে পড়ার জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে একটা নাকফুল কিনেছি। একটি আংটিও কিনব।’
ফ্যাশন হাউস আড়ংয়েও মায়ের সঙ্গে নাকফুল কিনতে এসেছিলেন সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী তানহা। তিনি জানান, সোনার নাকফুল তাঁর খুব পছন্দ।
আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী সাবরিনা জানালেন, ঈদ উপলক্ষে ক্রেতারা ছোট্ট পাথরের সোনার নাকফুল বেশি কিনছেন। এ ছাড়া মিনা করা ও পাথর বসানো ছোট সোনার দুল ও আংটিও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।
বিপণিবিতানের বিক্রেতারা জানালেন, সোনার নাকফুল পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। হীরা বসানো নাকফুলের দাম অবশ্য আরও বেশি। কানের দুলের ক্ষেত্রে ঈদে ক্রেতারা ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে বেশি সীমাবদ্ধ থাকেন। ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা দামের আংটির বিক্রিও ভালো চলছে।
তবে ক্রেতাদের আগ্রহ অল্প দামের আংটি ও নাকফুলে সীমাবদ্ধ থাকায় হতাশ সোনার ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, একটা সময়ে ঈদকে ঘিরে বেশ বেচাকেনা হতো সোনার। কিন্তু এখন বিয়ে-শাদি ছাড়া কেউ সোনার দোকানমুখী হন না। সোনার দাম যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি বলে এই অবস্থা মনে করছেন বিক্রেতারা। সোনার গয়না যাঁদের পছন্দ ছিল, তাঁরাও ধীরে ধীরে রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেওয়া (গোল্ড প্লেটেড) গয়নার দিকে ঝুঁকছেন।
নিউমার্কেটের নিউ রূপসী জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী শওকত ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ১০ বছর আগেও ঈদে সোনার চেইন, আংটির পাশাপাশি সোনার হারের বিক্রি বেশ ভালো ছিল। পোশাক কেনা শেষে অনেক ক্রেতাই সোনার গয়না কিনতেন, অনেকে গয়না বানাতেও দিতেন। কিন্তু এখন নাকফুল, লকেট, আংটির মতো ছোট ছোট গয়না ঈদে বিক্রি হয়। তা-ও ক্রেতার সংখ্যা হাতে গোনা।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় গত মার্চেও দেশে সোনার দাম ভরিপ্রতি দেড় হাজার টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীদের আশা ছিল, দাম কমায় ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। তবে বাস্তবে সেটি ঘটেনি বলে জানান বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর। তিনি বলেন, ‘ঈদের পরে বিয়ের মৌসুম শুরু হবে। সে উপলক্ষে বেচাকেনা বাড়বে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখনো আশানুরূপ কিছু ঘটেনি।’
ব্যবসায়ীরা জানালেন, বর্তমানে ২১ ক্যারেট সোনার দাম ভরিপ্রতি ৪১ হাজার ২০০ টাকা। আর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিপ্রতি সাড়ে ৪৪ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে মজুরি।
নিউমার্কেটের একটি দোকান থেকে পুরোনো গয়না ভেঙে নতুন নকশার গয়না বানিয়েছেন আন্দরকিল্লার বাসিন্দা ফেরদৌসী আকতার। তিনি বলেন, ‘সোনার গয়নায় যে আভিজাত্য রয়েছে, সেটি অন্য গয়নায় পাওয়া যায় না। তবে প্রতিবছর তো আর সোনা কেনা সম্ভব নয়। এ বছর তাই পুরোনো গয়না ভেঙে নতুন ডিজাইনের গয়না বানিয়ে নিলাম।’