সোলার নয়, শিল্পের বিদ্যুৎ দাবি

৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নিয়েছে ওজোপাডিকো। শিল্পের বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করছেন স্থানীয়রা।

সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসেছে সোলার প্যানেল। বিদ্যুতের দেখা পেয়েছে ভোলার মনপুরাবাসী। তবে সেই বিদ্যুতে না চলে ফ্যান, না ঘোরে কলকারখানার চাকা। আবার বিদ্যুৎ থাকে কয়েক মাত্র ঘণ্টা। সেই বিদ্যুৎও পৌঁছেছে গুটি কয়েক মানুষের ঘরে।

এ অবস্থায় দ্বীপ উপজেলাটিকে পুরোপুরি আলোকিত করতে নেওয়া হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প। সেই প্রকল্পেও নবায়নযোগ্য এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। কিন্তু এলাকাবাসীর চাওয়া, নিরবচ্ছিন্ন সেই বিদ্যুতে যাতে শিল্পকারখানা চলে। মনপুরাকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার দাবি তাঁদের।

সাগর মোহনায় অবস্থিত মনপুরা উপজেলায় বসবাস লক্ষাধিক মানুষের। বর্তমানে চার হাজারের মতো গ্রাহক দিনে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে ৭০০ থেকে ৭৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ওজোপাডিকো (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড)। সেই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন উপজেলা শহরের হাজিরহাট বাজার ও আশপাশের ৮৫৪ গ্রাহক। তবে সারা দিন বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় সন্ধ্যাবেলা। রাত ১২-১টা না বাজতেই বিদ্যুৎ চলে যায়।

এর বাইরে বাংলাবাজার, সিরাজগঞ্জবাজার ও কাউয়ারটেক এলাকায় সৌরবিদ্যুতের তিনটি মিনি গ্রিড বসেছে ২০১৫ সাল ও তার পরবর্তী সময়ে। এ তিন গ্রিড থেকে এখন ৬৭৭ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর বিপরীতে গ্রাহক আছেন ৩ হাজার ৩০০। তাঁরা ‘প্রি-পেইড’ পদ্ধতিতে ৩০ টাকা ইউনিট দরে বিদ্যুৎ কিনছেন। এই দামে বিদ্যুৎ কেনা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে।

শীতের সময় কুয়াশা থাকে। বৃষ্টি হলে আকাশ মেঘলা থাকে। এমন সব দিনে সৌর প্যানেল ঠিকমতো কাজ করে না।
মুজিবুর রহমান, মনপুরার তিনটি সোলার মিনি গ্রিডের পরিচালক

ডিজেলের ইঞ্জিন দিয়ে বা সৌর প্যানেলে উৎপাদিত বিদ্যুতের কোনোটাই গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। কারণ, এ বিদ্যুতে কোনোমতে বাতি জ্বলে। তার সঙ্গে টিমটিমিয়ে জ্বলা কুপিবাতির পার্থক্য থাকে না। কয়েক শ বছরের পুরোনো এ দ্বীপের বেশির ভাগ শিশুর পড়াশোনার ক্ষেত্রে এ কুপিবাতিই আজও ভরসা। উপযুক্ত বিদ্যুতের অভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার, এক্স-রেসহ কোনো পরীক্ষার কাজ হয় না। প্রজেক্টর, কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিছুই চলে না। দিনের বেলায় যন্ত্রপাতি চালানোর বিদ্যুৎ পেতে কেউ কেউ বিকল্প ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।

মনপুরায় অবস্থিত তিনটি সোলার মিনি গ্রিডের পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, শীতের সময় কুয়াশা থাকে। বৃষ্টি হলে আকাশ মেঘলা থাকে। এমন সব দিনে সৌর প্যানেল ঠিকমতো কাজ করে না। বিদ্যুৎ পাওয়া যায় স্বাভাবিকের এক-চতুর্থাংশ। ফলে বছরের বিভিন্ন সময় তাঁরা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দিতে পারেন না। তার চেয়ে বড় কথা, সৌরবিদ্যুতে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান চলে না।

এ অবস্থায় সোলার গ্রিডের বিদ্যুতে আস্থা নেই উপজেলার বাসিন্দাদের। বিষয়টি নিয়ে গত জুনে তাঁরা তিন দফায় আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁদের কথা, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ঘোষণার আলোকে মনপুরায় মানসম্মত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

এ দ্বীপ উপজেলাকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে ভোলার আরও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন এলাকার মতো মনপুরায় সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আনতে হবে। যেনতেনভাবে সোলার প্যানেলের গ্রিড বসিয়ে বিদ্যুৎ দিলে মানবে না মনপুরাবাসী। মনপুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেলিনা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা উপজেলার ঘরে ঘরে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাই। সেই বিদ্যুতের দাম হতে হবে দেশের অন্য এলাকার মতোই। এমন বিদ্যুৎ দিতে হবে, যাতে কলকারখানা চলবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, সরকারি ঘোষণার আলোকে ২০২১ সালের মধ্যে তারা মনপুরাতেও শতভাগ বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে চায়। এ জন্যই এখানে ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওজোপাডিকো। এর আওতায় মনপুরা ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন কলাতলী চরের ১ হাজার ৪৭১টি পরিবারকে ইতিমধ্যে বিনা মূল্যে সৌর প্যানেল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মনপুরায় ৩ মেগাওয়াটের সোলার মিনি গ্রিড স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই সোলার গ্রিড বসাবে ইডকল (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড)।

মনপুরা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, ইডকল যে দরেই তাঁদের বিদ্যুৎ দিক, ওজোপাডিকো গ্রাহকের কাছ থেকে সরকারনির্ধারিত মূল্যই নেবে। উপজেলার প্রতিটি ঘরে ও প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ওজোপাডিকো দ্রুতগতিতে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মনপুরাকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চিন্তাও তাঁদের আছে।