সোহাগীর চাটাই যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে

সোহাগী ইউনিয়নের বাঁশের চাটাইয়ের সুনাম দেশব্যাপী
ছবি: প্রথম আলো

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আমার আছে জল চলচ্চিত্রের প্রথম দৃশ্যেই দেখা মেলে সোহাগী রেলস্টেশনের। হুমায়ূন আহমেদের আরও বেশ কিছু নাটকের কারণে ‘সোহাগী’ নামটি অনেকের কাছেই চেনা। মূলত ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম সোহাগী। এই ইউনিয়নের নামেই সোহাগী রেলস্টেশন।

তবে সোহাগীর খ্যাতি শুধু নাটক কিংবা সিনেমার জন্য নয়, এই এলাকার তৈরি বাঁশের চাটাইয়ের সুনাম দেশব্যাপী। ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই বাঁশ দিয়ে চাটাই তৈরি হয়। উৎপাদিত হাজার হাজার চাটাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়।

সম্প্রতি সোহাগী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার বৃ-কাঁঠালিয়া, সোহাগীপাড়া, বগাপোতা, মুক্তাপুর, ভালকাপুর, খানপুর, হাটুলিয়া, দড়ি-বৃসহ বেশ কিছু গ্রামে তৈরি হচ্ছে চাটাই। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে চাটাই তৈরির ব্যস্ততা। সেই বেত দিয়ে বাড়ির গৃহবধূরা চাটাই বুনছেন।

দড়ি-বৃ গ্রামের মো. আবদুর রাশিদ জানালেন, চাটাই তৈরির মূল উপকরণ হচ্ছে বাঁশ। এখানকার প্রতিটি বাড়ির পাশেই একাধিক বাঁশঝাড় রয়েছে। এসব বাঁশ দিয়েই তাঁরা চাটাই তৈরি করেন। এরপর সেই চাটাই বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সোহাগী বাজারে। সেখান থেকে ছাটাই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার সোহাগীতে চাটাইয়ের হাট বসে।

স্থানীয়ভাবে তৈরি চাটাই সোহাগী রেলস্টেশন থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে
ছবি: প্রথম আলো

সোহাগী বাজারের ৭৫ বছর বয়সী মধু চৌহান ৩০ বছর ধরে চাটাইয়ের ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, তিনি যখন ব্যবসা শুরু করেছেন, তখন ট্রেন ও ট্রাকযোগে সারা দেশে চাটাই পাঠাতেন। তবে এখন তিনি মূলত ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রামসহ আরও কিছু জেলায় চাটাই বিক্রি করেন। নির্মাণশিল্পের সাটারিংসহ নানাকাজে এসব চাটাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্রেতারা ফোনে তাঁকে পরিমাণ, পরিমাপ ও চাহিদার কথা জানিয়ে দেন। তিনি চাহিদা মোতাবেক হাট থেকে চাটাই কিনে সেগুলো বাঁধাই করে ট্রেনযোগে গন্তব্যে পাঠিয়ে দেন।

মধু চৌহানের মতো অনেকেই চাটাই কেনাবেচা, আবার কেউ চাটাই তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার ইউনিয়নের অনেকে মূল পেশার বাইরে অবসর সময়ে চাটাই তৈরি করেন।
বগাপোতা গ্রামের মো. হাছেন আলী জানান, কৃষিকাজ তাঁর মূল পেশা। তবে অবসর সময়ে তিনি বাড়িতে চাটাই তৈরি করেন। বাড়তি এ কাজে তাঁর প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা আয় হয়।