স্কুলশিক্ষকসহ দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় মুঠোফোন ব্যবহার এবং ওই মুঠোফোনে প্রশ্নের উত্তর লিখে দেওয়ার অভিযোগে এক স্কুলশিক্ষকসহ দুজনের বিরুদ্ধে জিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা হয়েছে। কক্ষ পরিদর্শক তাঁদের বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আজ বুধবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া ওই মামলার আসামিরা হলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের ধরধরা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শশী ভূষণ (৪৫) ও  একই ইউনিয়নের শালশিরি এলাকার বাসিন্দা মো. ওয়ালিউল্লাহ (৩০)। ওয়ালিউল্লাহ পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।

আজ দুপুরে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ ওই দুই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করলে পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবীর সরকার তাঁদের জেলহাজতে (কারাগারে) পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কার্যালয় থেকে ওই দুই ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয় সদর থানা পুলিশ। পরে রাতে তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন নিয়োগ পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শক ও করতোয়া কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের সহকারী শিক্ষক রাকিবুল হাসান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির জনবল নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই পরীক্ষায় পঞ্চগড় বিষ্ণুপ্রসাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি কক্ষে সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের পরীক্ষা দিতে আসেন মো. ওয়ালিউল্লাহ। দেড় ঘণ্টার ওই পরীক্ষার এক ঘণ্টা যাওয়ার পর ওয়ালিউল্লাহকে স্মার্টফোন ব্যবহার করে উত্তরপত্রে লিখতে দেখেন কক্ষ পরিদর্শক রাকিবুল হাসান। এ সময় তিনি তাঁর পরীক্ষার প্রবেশপত্র, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র ও স্মার্টফোনটি নিয়ে নেন এবং তাঁকে দায়িত্ব পাওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যান।

পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপ্রসাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মো.ওয়ালিউল্লাহর স্মার্টফোনটি যাচাই-বাছাই করা শুরু করেন। এ সময় কৌশলে ওয়ালিউল্লাহ পালিয়ে যান। পরে স্মার্টফোনটি যাচাই করে দেখা যায়, ওই পরীক্ষার্থী তাঁর ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে ধর ধরা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শশী ভূষণের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়েছেন এবং সমাধান করে নিয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় ওই পরীক্ষার্থী এবং স্কুলশিক্ষককে কৌশলে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর রায়ের কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। এ সময় অপরাধ স্বীকার করলে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ওই দুই ব্যক্তিকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। আজ দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘ওয়ালিউল্লাহ নামের ওই চাকরিপ্রার্থী স্মার্টফোনসহ কক্ষ পরিদর্শকের কাছে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে বহিষ্কারসহ পরীক্ষার উত্তরপত্র বাতিল করা হয়। এ সময় তিনি কৌশলে পালিয়ে গেলেও আমরা তাঁর জব্দকৃত মুঠোফোন ঘেটে একজন স্কুলশিক্ষকের সম্পৃক্ততা পাই। পরে দুজনকেই কৌশেলে ডেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে সময়মতো ধরা পড়ে যাওয়ায় তাঁদের ওই অপকৌশল নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।’