স্কুলের মাঠে মেলার সরঞ্জাম, খেলাধুলা, হাঁটাহাঁটি বন্ধ

গত ১৪ মার্চ শিল্প–বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই সপ্তাহ পর মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মেলা শেষ হলেও তোরণ ও স্টলের অবকাঠামো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। গত শুক্রবার ফরিদপুরের মহিম ইনস্টিটিউশনের মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। পরে মেলা বন্ধ হয়ে গেলেও সরঞ্জাম ফেলে রাখা হয়েছে। প্রায় তিন মাস ওই মাঠে কেউ খেলা বা হাঁটাহাঁটি করতে পারছে না। এই চিত্র ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকায় অবস্থিত মহিম ইনস্টিটিউটের মাঠের।

মহিম ইনস্টিটিউট মাঠটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট এবং প্রস্থ ৩২০ ফুট। এটি এলাকার একমাত্র বড় মাঠ। প্রতিদিন বিকেলে এখানে মহিম ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের কিশোর-তরুণেরা খেলাধুলা করে। বৃদ্ধরা হাঁটাহাঁটি করার জন্য এবং ভোরে স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা দৌড়ানোর জন্য মাঠটি ব্যবহার করেন। বর্তমানে মাঠ ব্যবহার করতে না পারায় বিপাকে রয়েছেন ওই এলাকার লোকজন।

শহরের শোভারামপুর মহল্লার বাসিন্দা সঞ্জয় কুমার সাহা (৩৫) বলেন, মেলা বন্ধ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও মাঠটি পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে মাঠটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এলাকার কিশোর-তরুণেরা ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা বিপথগামী হয়ে যেতে পারে।

শোভারামপুর এলাকার বাসিন্দা মহিম ইনস্টিটিউটের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাধন মালো জানান, খেলার মাঠে খেলা যায় না। বাড়ির পাশেও খেলার কোনো জায়গা নেই। স্কুল বন্ধ তাই ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটে তার।

মেলাটি মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা চলতি মাসের মধ্যে মাঠটি ফাঁকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গোলাম হাফিজ, উপমহাব্যবস্থাপক, ফরিদপুর বিসিক

ওই এলাকার মুদি ব্যবসায়ী বলাই সাহা (৪০) বলেন, আগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লোকজন মাঠে ঘুরতে আসত। সারা দিনই তরুণদের বিভিন্ন দল খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। সেই মাঠ এখন বাঁশসহ মেলার অবকাঠামো তৈরির সামগ্রী দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মার্চ বিসিকের উদ্যোগে শিল্প–বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। মেলার ব্যবস্থাপনায় ছিল গ্রিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। মেলায় প্রবেশমূল্য ধরা হয় ১০ টাকা। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা চারু ও কারু পণ্যের ৮৫টি দোকান ছিল। জেলা প্রশাসক অতুল সরকার মেলার উদ্বোধন করেন। মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৩ এপ্রিল। কিন্তু সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় ২৯ মার্চ মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মহিম ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘এ মাঠে মেলা আয়োজন করা হোক, তা আমরা চাইনি। মেলা আয়োজনের চিঠি দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক।’

ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, মেলা বন্ধ হওয়ার পর তিনি বিসিকের কর্মকর্তা ও মেলার আয়োজক গ্রিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু মাঠটি পরিষ্কার করছেন না।

এ বিষয়ে গ্রিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ওহেদুল ইসলাম করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এ কারণে সমস্যা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে মাঠটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা। বিসিক ফরিদপুরের উপমহাব্যবস্থাপক গোলাম হাফিজ বলেন, ‘মেলাটি মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা চলতি মাসের মধ্যে মাঠটি ফাঁকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’