স্কুল ধুয়েমুছে প্রস্তুত, অপেক্ষা শিক্ষার্থীর

তারাগঞ্জ উপজেলার কাচঁনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষকেরা। ৯ সেপ্টেম্বর
প্রথম আলো

‘টানা ১৭-১৮ মাস ধরে স্কুলে যেতে পারিনি। বাড়িতে বন্দী ছিলাম। ঘরে বসে থাকতে থাকতে অনেক সময় পড়াশোনাতে মন বসত না। কখনো দম বন্ধ হয়ে আসত। অসহ্য লাগত। করোনার কারণে ভয়ে কোথাও যেতে পারিনি। রোববার থেকে স্কুলে যেতে পারব, এটা ভাবলেই অন্য রকম ভালো লাগছে।’ কথাগুলো রংপুরের বদরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেবেকা সুলতানার।

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ১৭ মাসের বেশি সময় পরে আগামী রোববার সারা দেশের স্কুল ও কলেজগুলো খুলছে। এতে হতাশা কেটে রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসাহ। ইতিমধ্যে তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাক–পরিচ্ছদ পরিষ্কার করে নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ধুয়েমুছে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন শুধু শিক্ষার্থীদের আগমনের প্রতীক্ষা। শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রত্যাশা, রোববার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠবে।

তারাগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলে, ‘দেড় বছর পরে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে রোববার দেখা হবে। হবে পড়াশোনা ও গল্পগুজব। এ জন্য তিন দিন আগে স্কুল ড্রেস ধুয়ে পরিষ্কার করেছি। ১০টায় স্কুল শুরু, কিন্তু সকাল ৯টার মধ্যেই যাব। কি যে ভালো লাগছে তা বোঝাতে পারব না।’

বদরগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৭৩টি, মাধ্যমিক ৫৬টি এবং দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে ২৫টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তারাগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৫টি, মাধ্যমিক ও দাখিল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩২টি। শিক্ষার্থীসংখ্যা ২৯ হাজার ৮৯০।

শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রত্যাশা, রোববার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠবে।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আশরাফগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ধুয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। ৮ সেপ্টেম্বর
প্রথম আলো

বদরগঞ্জ উপজেলার বৈরামপুর শান্তিরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে স্কুল ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। স্কুলে প্রবেশের গেটে হাত ধোয়ার পানি ও সাবানের ব্যবস্থা রয়েছে। একজন মাস্ক নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন। শিক্ষার্থীরা সেখানে হাতমুখ পরিষ্কার করে মুখে মাস্ক পরার পরেই কেবল স্কুলে ঢুকতে পারবে। এ ছাড়া ২ হাজার ৮০০ টাকায় কিনেছি শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র। কক্ষের এক পাশে থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।’

তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলিয়ার হোসেন বলেন, স্কুলের ভেতরের জঙ্গল কেটে এবং স্কুল ধুয়ে পরিষ্কারের পরে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে পড়েছে। আশা করছেন রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের পদচারণে আবার মুখর হয়ে উঠবে।

বদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শায়লা জেসমিন বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে ধুয়েমুছে প্রস্তুত করেছি। এখন অপেক্ষা শিক্ষার্থী আগমনের।’