স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেওয়া হলো না খোকনের

পদ্মায় দুই ফেরির সংঘর্ষে পিকআপচালক খোকন সিকদার নিহত হন। স্বামীর নিথর দেহ নিয়ে গ্রামে ফিরছেন খোকনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। রোববার সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

শনিবার রাত নয়টায় জাজিরার সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাটে পৌঁছে স্ত্রী তাহমিনা আক্তারের মুঠোফোনে কল দেন খোকন সিকদার। কথা বলেন সন্তানদের সঙ্গেও। রাত দুইটার দিকে স্ত্রীকে ফোনে ফেরিতে ওঠার কথা জানান। সকালেই তাঁর বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর খবরে সকালে ঘুম ভাঙে তাহমিনার।

স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দুই বছরের শিশুসন্তান কোলে নিয়ে সকালে শিমুলিয়া ঘাটে ছুটে আসেন তাহমিনা। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুপুরে স্বামীর নিথর দেহ নিয়ে ফেরিতে পদ্মা পার হন। অথচ ২৬ জুন স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন খোকন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে শিমুলিয়া-সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাট নৌপথে চলন্ত দুই ফেরির মুখোমুখি সংঘর্ষে পিকআপচালক খোকন নিহত হন।

আমার সব শেষ হয়ে গেল। জীবনে শেষবারের মতো স্বামীর সঙ্গে পদ্মা পার হচ্ছি, তবে প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে। চার শিশুসন্তান নিয়ে এখন আমি কোথায় দাঁড়াব?
নিহত খোকন সিকদারের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার

তাহমিনা প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ বছর ধরে ফেরিতে গাড়ি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন তাঁর স্বামী। বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের দুর্যোগে পড়েছেন, মোকাবিলা করে নিরাপদে পৌঁছেছেন। কখনো ভাবেননি, এভাবে তিনি মারা যেতে পারেন। ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হবে। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ২৬ জুন চার সন্তান ও তাঁকে নিয়ে পদ্মা সেতু পার হবেন।

তাহমিনা বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। জীবনে শেষবারের মতো স্বামীর সঙ্গে পদ্মা পার হচ্ছি, তবে প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে। চার শিশুসন্তান নিয়ে এখন আমি কোথায় দাঁড়াব?’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

দুর্ঘটনায় নিহত খোকনের মামা শাহজালাল সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, খোকন ১৫ বছর ধরে গাড়ি চালান। কখনো ব্যক্তিগত গাড়ি, কখনো ট্রাক চালাতেন। দুই বছর ধরে মাছ পরিবহনের পিকআপটি চালাচ্ছিলেন খোকন। স্ত্রী ও চার শিশুসন্তান নিয়ে ঢাকার মধ্য বাড্ডায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর মা–বাবা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার চিংবাখালী গ্রামে থাকেন। আজ সন্ধ্যায় গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফেরি দুর্ঘটনায় নিহত খোকনের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ফেরি সুফিয়া কামাল ৩০টি যানবাহন নিয়ে শরীয়তপুরের সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাচ্ছিল। একই নৌপথে ৩৪টি যানবাহন ও অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাট অভিমুখে যাচ্ছিল ফেরি বেগম রোকেয়া। রাত সাড়ে তিনটার দিকে দুটি ফেরি পদ্মা নদীর টার্নিং পয়েন্ট জাজিরা প্রান্তে পৌঁছালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুটি ফেরির সামনের অংশ। বিকল হয়ে যায় বেগম রোকেয়া ফেরির গাড়ি ওঠানামার র‍্যাম্প। এ সময় সুফিয়া কামাল ফেরিতে থাকা একটি গাড়ির চাপায় পড়ে ঘটনাস্থলেই খোকন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১০ জন। বেগম রোকেয়া ফেরিতে থাকা গাড়িচালক শামিম মোল্লা নিখোঁজ আছেন। অভিযোগ উঠেছে, রাতে চলাচলকারী দুটি ফেরির পথনির্দেশক লাইট (সার্চলাইট) জ্বলছিল না। ওই ঘটনা তদন্তে বিআইডব্লিউটিসি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।