স্থাপনা আছে, সেবা নেই

ঝিনাইদহে চারটি কেন্দ্র উদ্বোধন হলেও পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ হয়নি একটিতেও। ফলে রোগীরা কেন্দ্রগুলোতে এসে সেবা পাচ্ছেন না।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত ১০ শয্যার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র। জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় এটি চালু হয়নি। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

ঝিনাইদহ জেলায় নতুন চারটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্র উদ্বোধনের তিন বছর পেরিয়েছে। একটি উদ্বোধনের অপেক্ষায়। যে উদ্দেশে এই মা ও শিশু কেন্দ্র করা, তার সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। কারণ, পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ হয়নি একটিতেও। ফলে রোগীরা কেন্দ্রগুলো থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাইরে থেকে ধারে চিকিৎসক এনে কোনো রকমে বহির্বিভাগ চালু রেখেছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ সূত্রে জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলার কাঁচের কোল গ্রামে মুন্সী আশরাফ চৌধুরী ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২ আগস্ট। ঝিনাইদহ সদরে দক্ষিণ কাস্টসাগরায় কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয় একই বছর ১০ ডিসেম্বর। সর্বশেষ কালীগঞ্জ শহরের শোয়াইবনগর এলাকার কেন্দ্রটি ২২ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছে। তিনটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। আরেকটি শৈলকুপা উপজেলার দুধস্বর গ্রামে নির্মিত ১০ শয্যা দুধস্বর মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, যার নির্মাণকাজ শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি। এগুলো সবই ১০ শয্যাবিশিষ্ট। যার প্রতিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা করে।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ১৫৯টি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র চালু করতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ১ হাজার ৫৯০ জন জনবল নিয়োগের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, একজন ফার্মাসিস্ট, চারজন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও একজন অফিস সহায়ক। এ ছাড়া সেবা গ্রহণ নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড বয় ও আয়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে না পারায় কেন্দ্রগুলো চালু হচ্ছে না।

ঝিনাইদহে চালু হওয়া তিনটি কেন্দ্র গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, কেন্দ্রগুলোর ছাই রঙের ঝকঝকে তিনতলা ভবনের চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সামনে বিশাল আকৃতির ফটক, ভেতরে খোলামেলা অনেকটা জায়গা। ভবনের কক্ষগুলোতে পড়ে আছে মূল্যবান সব যন্ত্রপাতি, আছে আধুনিক শয্যাও।

মঙ্গলবার কাঁচের কোল মুন্সী আশরাফ চৌধুরী মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে দেখা যায়, চিকিৎসা কর্মকর্তা গোলাম রহমান বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। ২-৪ জন রোগী অপেক্ষায় আছেন। বাকি কক্ষগুলো তালাবদ্ধ। চিকিৎসক গোলাম রহমান বলেন, তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই কল্যাণকেন্দ্রে রোগী দেখছেন। এখানে শুধু বহির্বিভাগ চালু রয়েছে।

কেন্দ্রের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা অন্যত্র চাকরি করেন। আপাতত এই প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে ধারে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে নিজস্ব জনবল ছাড়া মানুষের সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি ছাড়াও আরও যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউই এই প্রতিষ্ঠানের নন। অন্যত্র চাকরি করছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে তাঁরা কেবল বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২২-২৫ জন রোগী দেখছেন। কেন্দ্রে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি, উন্নতমানের শয্যা, চেয়ার, টেবিল, চিকিৎসকের ব্যবহারের মালামাল সবই পড়ে আছে।

বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ ১০ মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে দেখা যায়, চিকিৎসক কামাল হোসেন রোগী দেখছেন। তিনি বলেন, তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন। এই কল্যাণকেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিন দিন বসেন। বৃহস্পতিবার ১৭ জন রোগী দেখেছেন।

ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদ আহম্মেদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবলের অভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে উদ্বোধনের পর থেকেই তিনি অন্যত্র থেকে লোক এনে বহির্বিভাগগুলো চালু রেখেছেন। তিনি জানান, সরকারিভাবে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, তা সম্পন্ন হলে এগুলো চালু করা সম্ভব হবে।