‘স্বজনহীন’ আফসারকে উদ্ধার, ঠাঁই হলো হাসপাতালে

আফসার উদ্দিনকে উদ্ধার করে নেওয়া হচ্ছে রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘স্বজনহীন’ আফসারকে আজ শুক্রবার রাতে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতেই তাঁকে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দিয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।

চার দিন ধরে রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া মহল্লায় নিজ বাসায় স্বজনহীন আফসার উদ্দিন একাই পড়ে ছিলেন। প্রতিবেশীরা করোনা সন্দেহে তাঁর কাছে যেতে পারছিলেন না। ৭০ বছর বয়সী আফসার উদ্দিন বাড়ির বরান্দায় মানবেতর অবস্থায় পড়ে ছিলেন। এই চার দিন তিনি পড়ে থেকেই পায়খানা–প্রস্রাব করেছেন। শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘স্বজনহীন আফসার চার দিন ধরে একাই বাড়িতে পড়ে আছেন’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এরপর রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল তাঁকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেন।

জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক রাত নয়টার দিকে খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে আফসারের বাড়িতে উপস্থিত হন। প্রথমেই জাতীয় তরুণ সংঘের রাজশাহী সভাপতি তাকাদ্দছ কাজল ও সদস্য মানিক র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে আফসার উদ্দিনের করোনা পরীক্ষা করেন। তাকাদ্দছ কাজল জানান, আফসার উদ্দিন করোনায় আক্রান্ত হননি।

রাজশাহীর সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি চিকিৎসক খুরশীদ আলম অক্সিজেন লেভেল পরীক্ষা করে জানান, তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেছে। তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। সিভিল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে এডিসি জেনারেল সিদ্ধান্ত নেন, আফসার উদ্দিনকে নিরিবিলি পরিবেশে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রাজশাহী পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়াই ভালো হবে।

এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও জাতীয় তরুণ সংঘের স্বেচ্ছাসেবক দল আফসার উদ্দিনকে গোসল করান। সাগরপাড়া-বোসপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আফসার উদ্দিনের প্রতিবেশী শেখ মো. রেজাউর রহমান তাঁর জন্য নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করেন।

আফসার উদ্দিন একতলা বাড়িতে একাই থাকেন। তাঁর বাড়ি ও জায়গা এই শহরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। তিনি না থাকলে এই সম্পত্তি বেদখল হয়ে যেতে পারে। এ জন্য এডিসি জেনারেল সম্পত্তির বিষয়টি দেখভাল করার জন্য বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পক্ষে ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপপরিদর্শক মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেন।

এডিসি মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, জেলা প্রশাসক আফসার উদ্দিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়মিত তাঁর তদারক করবেন। তাঁর খাওয়াদাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, তেল, সেমাই, ফলমূল দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন