প্রথম আলো: কী চিন্তা থেকে মুক্ততারা প্রতিষ্ঠা করলেন?
নাফিউর: এসএসসি পরীক্ষার পর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সময় কাটছিল না। ওদিকে আমার বাসার সামনেই রেলস্টেশন। শৈশব থেকেই সেখানে ভাসমান মানুষের কষ্ট দেখেছি। ভাবলাম তাদের জন্য কিছু করি। দরিদ্র মানুষকে সহায়তার জন্য কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে মুক্ততারা প্রতিষ্ঠা করি। পরে এ উদ্যোগে যোগ দেন বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের একদল শিক্ষার্থী।
শুরুটা কী কাজ করে হয়েছিল?
নাফিউর: বগুড়া শহরের একটি এতিমখানায় ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে মুক্ততারার কার্যক্রম শুরু। এরপর ইফতার আয়োজন, কম্বল বিতরণ, করোনাকালে অসহায় মানুষের ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া, দরিদ্র পরিবারে শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ, নিম্ন আয়ের করোনা রোগীদের ফলমূল ও পথ্য কিনে দেওয়া, বন্যাদুর্গতদের সহায়তা, বেদেপল্লিতে খাবার বিতরণ—নানান কাজ আমরা করেছি।
এই সহায়তার অর্থ আসছে কোথা থেকে?
নাফিউর: শুরুর দিকে নিজেরা হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে, ঈদের পোশাকের টাকা বাঁচিয়ে এসব কাজ করতাম। পরে অনেক মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। আকবরিয়া কেয়ার ফাউন্ডেশন অর্থ ও খাবারসহায়তা দিচ্ছে।
সাহ্রি ও ইফতারের খাবারে কী কী পদ থাকে?
নাফিউর: সাহ্রিতে ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস, মাছ অথবা ডিম। কোনো কোনো দিন চিকেন বিরিয়ানিও দেওয়া হয়। ইফতারে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পিঁয়াজু, বুন্দিয়া, খেজুর, অন্য ফল ইত্যাদি থাকে। শুক্রবার দেওয়া হয় বিরিয়ানি।
আপনারা প্রতিদিন শতাধিক মানুষকে খাবার দেন। এত মানুষের খাবার রান্না কে করে দেয়?
নাফিউর: আমার বাসায় মেগা কিচেন (বড় রান্নাঘর) চালু হয়েছে। সেখানেই রান্না হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরাই বাজার-সদাই করেন, নিজেরাই রান্নার আয়োজন করেন। সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান মেগা কিচেনের সাহ্রির খাবার তৈরির আয়োজনে দলনেতার কাজ করছেন। তাঁকে সহায়তা করেন একই কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া তামান্না, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিয়াম শেখ, রিফাত, জীবন, রাকিব, নূর আলমসহ অনেকে।
আর ইফতারের খাবার?
নাফিউর: ইফতার আয়োজন তত্ত্বাবধান করেন ফারিয়া তামান্না। তাঁকে সহায়তা করেন শিক্ষার্থী রুবি ইসলাম, শাহরিমা সুমা, বর্ষা খাতুন, সাবাহা সুলতানা, আসিফ নেহাল, হুজ্জাতুল আরিফিন, আল-আমিন, রাহাত খান, জিহাদ হোসেন ও মাহফুজ ইসলাম। রান্নায় সহযোগিতা করেন রেণু বেগম ও বিউটি। অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করেন রাহাত।
ঈদুল ফিতরে বিশেষ কিছু করার পরিকল্পনা আছে?
নাফিউর: ঈদে শহরের শ্রমজীবী, ভাসমান মানুষ, বিশেষ করে রিকশাচালক, ভিক্ষুকেরা ভালো খাবার খেতে পারেন না। এবারের ঈদে শহরের ৫০০ জন মানুষকে বিশেষ খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মুক্ততারা সোসাইটি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
নাফিউর: আমাদের স্বপ্ন, শুধু রোজার মাসে নয়, সারা বছর দরিদ্র মানুষকে খাবার সহায়তা দিতে মেগা কিচেন চালু রাখা। অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাঁদের আয়ের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বপ্ন দেখি, সমাজে একজন মানুষও অনাহারে থাকবে না, ক্ষুধার জ্বালায় কেউ কষ্ট পাবে না।