স্বামী হত্যার মামলায় বাদী থেকে আসামি হলেন স্ত্রী

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্বামীকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হাফিজা বেগম ও তাঁর ছেলে হোসাইন
ছবি: প্রথম আলো

স্বামী হত্যার ঘটনায় প্রতিপক্ষকে আসামি করে থানায় মামলা দিয়েছিলেন স্ত্রী। তবে মামলার তদন্তে উঠে এসেছে স্বামীর হত্যার পেছনে মামলার বাদী অর্থাৎ নিহত ব্যক্তির স্ত্রীই জড়িত। মামলার আসামি হিসেবে তিনি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায়। খুন হওয়া সেকেন্দার আলী মোল্লা (৫৬) আলগী ইউনিয়নের চরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রীর নাম হাফিজা বেগম (৪৫)। গত ২৭ অক্টোবর এ হত্যা মামলাটি করা হয়।

হাফিজা বেগমের এজাহারের ভাষ্যমতে, গত ২৪ অক্টোবর রাত অনুমানিক আটটার দিকে স্বামী তাঁর আপন বড় ভাই খোকন মোল্লার কাছে পাওনা টাকা আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। ২৬ অক্টোবর দুপুরে চরকান্দা গ্রামের নির্মাণাধীন রেললাইনের দক্ষিণ পাশে রাঘদার বিলে জাল পাততে গিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি সেকেন্দারের লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে হাফিজা বেগম গিয়ে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় খোকন মোল্লা, খলিল মোল্লাসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন হাফিজা। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল কালাম আজাদ।

জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাফিজা বেগম ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে আলগী ইউনিয়নের আরামবাগ চরকান্দা গ্রামের আতিয়ার রহমান ওরফে ভুলুর (৬৫) সুসম্পর্ক ছিল। নিহত সেকেন্দারের সঙ্গে আপন বড় ভাই খোকন মোল্লা ও চাচাতো ভাই জমির মোল্লার টাকার ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধ ছিল। অপর দিকে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আতিয়ার রহমানের সঙ্গে খোকন মোল্লার বিরোধ ছিল।

পুলিশ বলছে, খোকন মোল্লাকে ফাঁসিয়ে এলাকায় আধিপত্য শক্তিশালী করতে হাফিজা বেগমের সঙ্গে আঁতাত করেন আতিয়ার রহমান। তাঁদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ফলে আতিয়ার সেকেন্দারকে হত্যা করে লাশ খোকন মোল্লার বাড়ির সামনে রেখে তাঁকে ফাঁসানোর ফন্দি করেন। এ প্রস্তাবে রাজি হন হাফিজা বেগম।

মামলার তদন্তের একপর্যায়ে ৮ জুন আতিয়ার রহমান ও তাঁর ছেলে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

সেই অনুযায়ী হাফিজা বেগম ২৫ অক্টোবর রাতে সেকেন্দার মোল্লাকে রাতে খাওয়ার পরে চারটি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাড়ির পাশে নিয়ে যান। সেখানে আতিয়ার রহমান আগে থেকেই ছেলে সম্রাটকে (২৯) নিয়ে অবস্থান করছিলেন। অর্ধচেতন অবস্থায় পুকুরপাড়ে আসার পর ওষুধের প্রভাবে সেকেন্দার আস্তে আস্তে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর হাফিজার সামনেই আতিয়ার রহমান শ্বাসরোধে সেকেন্দারকে হত্যা করেন। তাঁকে সাহায্য করেন সম্রাট। এরপর আতিয়ার ও সম্রাট সেকেন্দারকে ধরাধরি করে নৌকায় তুলতে গেলে সেকেন্দারের ছেলে হোসাইন (২১) ঘটনাস্থলে চলে আসেন। সেখানে আতিয়ার ও সম্রাট হোসাইনকেও বাবার মতো মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে তাঁরা নৌকায় লাশ তুলে ভাঙ্গা থানাধীন চরকান্দা রেললাইন থেকে একটু দূরে নিয়ে বিলের মধ্যে হাঁটুপানিতে ফেলে দেন। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযাযী প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার তদন্তের একপর্যায়ে ৮ জুন (মঙ্গলবার) আতিয়ার রহমান ও তাঁর ছেলে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। ৯ জুন আতিয়ার ও সম্রাট আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে গতকাল বুধবার রাতে আলগী ইউনিয়নের শাহমুল্লুকদী গ্রামে অভিযান চালিয়ে হাফিজা বেগম ও তাঁর ছেলে হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরাও বৃহস্পতিবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার বাদী আসামি হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে তিনি নিজেই এ হত্যা মামলার বাদী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তদন্তকাজ শেষ করবেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে।