সড়ক নেই, অকেজো সেতু

উপজেলার ঢাকা বাইপাস সড়কের কাছে সেতুটির অবস্থান। এক কর্মকর্তার ভাষ্য, বিশেষ তদবিরে সেতুটি হয়েছে।

সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজে আসছে না সেতুটি। সম্প্রতি ময়মনসিংহ নগরের ঢাকা-ফুলবাড়িয়া রোড বাইপাস এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তৃত জলাভূমি। আশপাশে মানুষের বসতি নেই। এর মধ্যে চোখে পড়ে একটি ছোট সেতু। একপাশে ছোট সড়ক থাকলেও সেতুর অপর পাশে সড়ক নেই। ৩১ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুটি সাত বছরেও ব্যবহার করতে পারেননি স্থানীয় লোকজন।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঢাকা বাইপাস সড়কের কাছে সেতুটির অবস্থান। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সেতুটি সম্পর্কে জানা যায়, এটি ঢাকা-ফুলবাড়িয়া বাইপাস সড়ক থেকে শতাব্দী আবাসন প্রকল্পের মধ্যে সংযোগ সেতু। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৯ ফুট। নির্মাণ ব্যয় ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৪৮২ টাকা।

সম্প্রতি দেখা যায়, সেতুটির একপাশে ফুলবাড়িয়া বাইপাস সড়ক আর অপর পাশে বিস্তৃত মাঠ। মাঠে কাশবন। বৃষ্টির পানি জমে আছে। বাইপাস সড়ক থেকে সেতু পর্যন্ত আনুমানিক ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক আছে। তবে অপর পাশে সড়ক নেই। কাগজে কলমে অপর পাশের স্থানটিকে শতাব্দী আবাসন প্রকল্প বলে উল্লেখ করা হলেও সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নেই। এমনকি কোনো আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ডও চোখে পড়েনি।

* ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে সেতুটি নির্মিত হয়। * সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৯ ফুট। এটি নির্মাণ ব্যয় ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৪৮২ টাকা।

উপজেলার বাড়েরা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সাত বছর আগে যখন সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সে সময় এ এলাকাটি আরও নির্জন ছিল। দিনের বেলাতেও সড়কটিতে মানুষের চলাচল ছিল না। ওই সময় সেতুর পাশের বাইপাস সড়কটি ব্যবহার করা হতো না। ঢাকা-ফুলবাড়িয়ার বাস ময়মনসিংহ শহরের ভেতর দিয়ে চলাচল করত। স্থানীয় বাসিন্দারা সড়কহীন এমন নির্জন স্থানে সেতু নির্মাণের কারণ জানত না।

বাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি সেতুর কাছে শহরের বাসিন্দারা জমি কিনেছেন বাড়ি নির্মাণের জন্য। কিন্তু সাত বছর ধরেই দেখে আসছি সেতুটি পরে আছে। কোনো বাড়ি নির্মাণের কাজ দেখি না।’

সেতুটির ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন বা মানুষ চলাচল না করায় দুই পাশে প্রচুর আগাছা জন্মেছে। বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচলকারী নাজমুল হোসেন নামে একজন বলেন, সেতুটির দুই পাশে আগাছা ও ঝোপ জন্ম নেওয়ায় সেখানে বিভিন্ন পোকা ও সাপের উপদ্রব আছে। এ কারণে কেউ শখ করেও সেতুটিতে উঠতে চান না।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল হক বলেন, সেতুটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন না। তবে শুনেছেন ফুলবাড়িয়া বাইপাস সড়কের পাশে এমন একটি সেতু আছে। কেন সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল, কেন সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে না তা তাঁর জানা নেই।

মনিরুল হক বলেন, ‘সেতুটি নিয়ে মাঝেমধ্যে আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। শুনেছি বিশেষ তদবিরের কারণে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল।’