হত্যা মামলার আসামিকে শিশু প্রমাণে ভুয়া সনদ, মামলার নির্দেশ আদালতের

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে একটি হত্যা মামলার আসামিকে শিশু হিসেবে প্রমাণের জন্য ভুয়া জন্মসনদ আদালতে দাখিল করেছে আসামিপক্ষ। আদালতকে বিভ্রান্ত করার অপরাধে দোষীদের বিরুদ্ধে সোনাগাজী থানা-পুলিশকে মামলা করার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। গতকাল রোববার ফেনীর আমলি আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন এই আদেশ দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ জুন সন্ধ্যায় অটোরিকশাচালক নুর আলমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ২০ জুন নুর আলমের বাবা নুর নবী বাদী হয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মেহেদী হাসান জনি ও তাঁর কয়েক সহযোগীকে আটক করা হয়। পরে মেহেদী হাসানকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জাকির হোসেন বলেন, আসামি মেহেদী হাসান ওই বছরের ১ জুলাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন ২০১৯ সালে ২৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে মেহেদী হাসানের বয়স ২০ বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট আসামি মেহেদী হাসানকে শিশু দাবি করে তাঁর আইনজীবী সৈয়দ ওয়ায়েজ মাহমুদ রাসেল ফেনীর শিশু আদালতে জামিনের আবেদন করেন। একই বছরের ২৫ আগস্ট শিশু আদালত মেহেদী হাসানের বয়স পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন অভিযুক্ত মেহেদী হাসানের বয়স পরীক্ষা করান। ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মেহেদী হাসানের হাড় ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ফেনী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুন নাহার জানান, মেহেদীর বয়স ২০-২২ বছর। চিকিৎসকের মতামতের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর আদালত সিদ্ধান্ত নেন, অভিযুক্ত মেহেদী হাসান শিশু নয়, প্রাপ্তবয়স্ক। সে অনুযায়ী তাঁর বিচার হবে।

এদিকে আসামি মেহেদী হাসানের আইনজীবী সৈয়দ ওয়ায়েজ মাহমুদ রাসেল চলতি বছরের ৩০ জুন আমলি আদালতে একটি জন্মসনদ দাখিল করে আসামিকে শিশু দাবি করেন। সেই সঙ্গে ফেনীর শিশু আদালতে নথি পাঠানোর আবেদন করেন। সেই জন্ম সনদ অনুযায়ী শিশু আদালত গত ১৮ জুলাই মেহেদী হাসানকে শিশু হিসেবে ঘোষণা করে তদন্ত কর্মকর্তাকে দোষীপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন আসামি মেহেদী হাসানের জন্মনিবন্ধন সনদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ আরও যাচাই-বাছাই করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি মেহেদী হাসানের জন্ম ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ। পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৯৮৩০১৯৪১৯০০৫৬৭০। জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রারের ৩৭ নম্বর পাতায় ২ নম্বর সিরিয়ালে এই তথ্য লিপিবদ্ধ আছে। সে অনুযায়ী, ২০১৯ সালে হত্যাকাণ্ডের সময় আসামি মেহেদী হাসানের বয়স ছিল ২১ বছর। বর্তমানে তাঁর বয়স ২৩ বছর।

অপর দিকে আদালতে দাখিল করা আসামির আইনজীবীর জন্মনিবন্ধন সনদে মেহেদী হাসানের জন্মতারিখ দেখানো হয়েছে ২০০২ সালের ৫ মার্চ। পরিচয়পত্র নম্বর ২০০২৩০১৯৪১৯০০৫৬৭০। সে অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর বয়স দেখানো হয় ১৭ বছর। সেই সঙ্গে মেহেদীকে সোনাগাজীর ওসমানিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাসনদে ২০১৫ সালে জুনিয়র দাখিল ও ২০১৮ সনের দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন আদালতে জমা হয়েছে। আসামির আইনজীবীও আমলি আদালতে আসামির জন্ম ও শিক্ষসনদ দাখিল করেছেন। আসামির আইনজীবীর দাখিল করা জন্ম ও শিক্ষাসনদ প্রতারণার মাধ্যমে তৈরি করা বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আদালতের সার্বিক পর্যালোচনায় স্পষ্ট যে আসামি মেহেদী হাসানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঠিক জন্মতারিখ ও বয়স থাকার পরও তদন্তকালে আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য ২০২০ সালে ২৩ আগস্ট আসামিকে শিশু হিসেবে দাবি করে আবেদন করা হয়েছে। পরে মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদনেও আসামি প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে প্রমাণ হয়।

সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, তিনি আদালতের আদেশের কথা শুনেছেন, তবে আদেশের কপি হাতে পাননি। সেটি হাতে পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।