হবিগঞ্জে করোনা রোগী ৮০৩, হাসপাতালে ভর্তি মাত্র দুজন

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল ভবন।
ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু খালি পড়ে আছে হাসপাতালের করোনা ইউনিট। জেলায় বর্তমানে আট শতাধিক করোনা রোগী থাকলেও জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মাত্র দুজন রোগী ভর্তি আছেন।

গতকাল সোমবার রাত আটটা থেকে আজ মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত জেলায় ১০৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ২৯ হাজার ২০ জনের। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২১ হাজার ১৭ জন। বর্তমানে জেলায় মোট ৮০৩ জন করোনা রোগী আছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে আইসিইউ না থাকা, সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ করোনাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এ হাসপাতালে ভর্তি হতে চান না।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সদর হাসপাতালের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় করোনা রোগীদের জন্য ১০০ শয্যার বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইউনিটজুড়ে সুনসান নীরবতা। ভর্তির তালিকায় বর্তমানে মাত্র দুজন রোগী। সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলায়ও করোনা রোগীদের জন্য ৫টি করে আরও ৩৫টি শয্যা রাখা হয়েছে। তবে কোনো হাসপাতালেই নেই আইসিইউ। কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি এই হাসপাতালগুলোতে।

আইসিইউ না থাকায় করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে কোনো রোগী এলেই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিলেট কিংবা ঢাকায়। জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ১১ রোগীকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার উবাহাটা গ্রামের আবদুস সত্তার গত বুধবার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পর থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় পরদিন চিকিৎসকেরা তাঁকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার নুরুল ইসলাম নামের এক করোনা রোগী শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে এই হাসপাতালে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সেবা ও আইসিইউ না থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁকে সিলেট কিংবা ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন রোগীর স্বজনেরা। রোগীর সঙ্গে আসা হেলাল মিয়া বলেন, রোগীর কষ্ট দেখে নিজেদের বেশ অসহায় লাগে। চিকিৎসকেরা কোনো ধরনের দায়িত্ব না নিয়েই তাঁদের রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে বাধ্য হয়ে তাঁরা সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন কোভিড হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়েও তাঁরা কোনো আইসিইউ খালি পাননি।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হবিগঞ্জে বর্তমানে আক্রান্তের প্রায় সবাই হয়তো নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যে কারণে করোনা ইউনিটে রোগী কম। এ ছাড়া এখনো আমরা এ হাসপাতালে আইসিইউ চালু করতে পারিনি। আইসিইউ না থাকার কারণে জটিল ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের সিলেট কিংবা ঢাকায় প্রেরণ করতে হচ্ছে।’

হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন মুখলেছুর রহমান বলেন, আজ এ জেলায় পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ। গতকাল ছিল ৪৬ শতাংশ। প্রতিদিন সমানভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে না, কমবেশি হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।