হবিগঞ্জে পানি বাড়ছে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন। আজ সোমবার বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জে বন্যার পানি বেড়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আজ সোমবার পর্যন্ত ৬টি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এদিকে জেলার কুশিয়ারা নদী ও খোয়াই নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর নবীগঞ্জ অংশের বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসন।

আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানি বিপৎসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর হবিগঞ্জ অংশে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ৪৫ দশমিক ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় বলে জানায় জেলা পাউবো।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জের মোস্তফাপুর আনোয়ারুল দাখিল মাদ্রাসার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রটি। আজ সোমবার
ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলার মধ্যে ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলা। এ চার উপজেলার উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী। এ চার উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর অংশগুলো বেড়ামোহনা, কালনী ও ধলেশ্বরী নদী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। কুশিয়ারা নদী সিলেটের শেরপুর (তিন জেলার মিলনকেন্দ্র) থেকে হবিগঞ্জের এ চার উপজেলা ঘেঁষে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে। কুশিয়ারা নদীর হবিগঞ্জ অংশের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই চার উপজেলার ২৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি হবিগঞ্জের খোয়াই নদের জয়নগর এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে শনিবার থেকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও লাখাই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া গুংঘিয়াজুড়ি হাওরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার অপর ভাটি উপজেলা বাহুবলের দুটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। জেলার বন্যাকবলিত ছয়টি উপজেলার মধ্যে আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে।

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ প্রথম আলোকে জানান, তাঁর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নই পুরোপুরিভাবে বন্যাকবলিত। সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। তিনি জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁরা ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছেন। তার মধ্যে আজ এক দিনেই ৮৬৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অনেক এলাকা থেকে লোকজনকে উদ্ধার করে এনে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা করে দিচ্ছেন তাঁরা।

বন্যার পানিতে ডুবে আছে ইনাতগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ। আজ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে
ছবি: প্রথম আলো

নবীগঞ্জের ইউএনও শেখ মহি উদ্দিন জানান, আজ ভোরে তাঁর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর বাল্লা-জগন্নাথপুর এলাকায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশ করে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এক দিনে প্রায় এক ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাঁর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন এখন প্লাবিত। জেলা প্রশাসক খবর পেয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

আজমিরীগঞ্জের ইউএনও সুলতানা সালেহা সুমী জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাঁর পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন পুরোপুরিভাবে প্লাবিত এবং আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকাও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আজ পর্যন্ত ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসন থেকে তাদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বাহুবল, হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই উপজেলা প্রশাসন তাঁদের এলাকায় পানি বৃদ্ধি হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলায় পরিস্থিতি কিছুটা আশঙ্কাজনক। এসব এলাকায় পানি বাড়ছে। তাঁরা জরুরি সেবা প্রদানে সব উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।