হবিগঞ্জ শহরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে গ্রাহকদের বিক্ষোভ

হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের সদস্যরা পিডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়
প্রথম আলো

হবিগঞ্জ শহরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জেলা বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরাম। তবে জেলা বিদ্যুৎ অফিসের সামনের গ্রাহকেরা সমবেত হতে চাইলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। পরে গ্রাহকেরা সিনেমা হল সড়কে অবস্থান নিয়ে তাঁদের প্রতিবাদ সভা করেন। প্রতিবাদকারী ব্যক্তিরা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন।

এদিকে বেলা দেড়টার দিকে এ আন্দোলনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। অনুরূপভাবে গত শনিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। এ ছাড়া প্রতিদিন ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের তালিকাভুক্ত হবিগঞ্জের প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক।

গ্রাহকদের অভিযোগ, শহরে অসংখ্য চোরাই বিদ্যুৎ–সংযোগ রয়েছে। এ বিদ্যুৎ–সংযোগগুলো থেকে শহরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চার্জ করা হয়। এ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। এ অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাপে শহরে সাতটি ফিডার চাপ সামলাতে পারে না।

এ গ্রাহকদের সংগঠন হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরাম আজ দুপুরে জেলা পিডিবি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় হবিগঞ্জ সদর থানার এক দল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের বিদ্যুৎ অফিসের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী এ সময় দাবি করেন, থানা থেকে পূর্ব–অনুমোদন না নিয়ে এ সমাবেশ করায় পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের এ আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফোরামের সদস্যরা। পরে গ্রাহকেরা সিনেমা হল সড়কের অবস্থান নিয়ে তাঁদের প্রতিবাদ সভা করেন।

প্রতিবাদ সভায় গ্রাহকেরা বলেন, হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতার বাইরে অসংখ্য চোরাই বিদ্যুৎ–সংযোগ রয়েছে। এ বিদ্যুৎ–সংযোগগুলো থেকে শহরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চার্জ করা হয়। এ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। যে কারণে তাঁরা এ অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করেন না। এ অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাপে শহরে সাতটি ফিডার চাপ সামলাতে পারে না। ট্রান্সফরমারগুলোতে ঘন ঘন ত্রুটি দেখা দেয়। যে কারণে শহরে ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দিয়েছে।

হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে বিক্ষোভ করলে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম (মাঝে পাঞ্জাবি পরা) আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। পিডিবি কাযালয়ের সামনে
প্রথম আলো

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শিবলী খান, সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান মোস্তাক গাজী ও মহিবুর রহমান টিটু, সাংবাদিক শওকত চৌধুরী, ফোরামের সদস্য মাহমুদল সুমন, আবদুল গফফার সোহেল প্রমুখ। আন্দোলনের খবর পেয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘গ্রাহকেরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। আপনারা এখান থেকে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন করে দেন। তাঁদের নিয়ে আমি পিডিবি কার্যালয়ে গিয়ে সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করব।’

বিদ্যুৎ ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক গাজী বলেন, হবিগঞ্জ শহরে যতগুলো অবৈধ সংযোগ আছে, সেগুলো অপসারণ করলেই বিদ্যুৎ স্বাভাবিক গতি পাবে। বিদ্যুৎ–লাইনের ক্ষমতার বাইরে সংযোগ থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেদের দুর্বলতার কারণে এ অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করছে না। একটি শহরে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তা কারও কাম্য হতে পারে না। যে কারণে তাঁরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে পিডিবিকে ২৪ ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছেন।

পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মজিদ বলেন, হবিগঞ্জ ৩৩ কেভি লাইন, যেটি শাহজাবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে হবিগঞ্জ শহরে এসেছে, এ লাইনের সমস্যার কারণে বিদ্যুতের এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন তা মেরামতের। আশা করছেন ঠিক হয়ে যাবে।