হাঁড়িভাঙায় ছেয়ে গেছে বাগান

বাগানের গাছগুলোতে শেষবারের মতো পরিচর্যা চলছে। অন্যবারের চেয়ে এবার আমের ফলন কম হয়েছে। তবে দাম ভালো পাওয়ার আশা চাষিদের।

গাছে ঝুলছে কাঁচা সবুজ হাঁড়িভাঙা আম। এবার ফলন কম হলেও দাম ভালো পাওয়ার আশা চাষিদের। গতকাল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট এলাকায়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম গাছে গাছে ঝুলছে। সবুজ পাতার ফাঁকে সবুজ আমে ছেয়ে গেছে আমবাগান। আর কটা দিন পর জুন মাসের মাঝামাঝি সময় বাজারে আসছে আঁশবিহীন সুস্বাদু মিষ্টি স্বাদের হাঁড়িভাঙা আম। তবে কয়েক দফা ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ফলন কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমচাষিরা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে জানা যায়, চাষিদের শেষ সময়ের পরিচর্চা চলছে আমবাগানে। পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করছেন কেউ। কেউবা ভিটামিন স্প্রে করছেন। সব মিলিয়ে আমচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেখছেন স্বপ্নও।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ, পদাগঞ্জসহ এর আশপাশ এলাকায় হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়ে আসছে। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এসব বাগান। চাষিদের নিবিড় পরিচর্যায় বাগানের গাছগুলোতে শেষবারের মতো পরিচর্যা চলছে। চাষিরা জানিয়েছেন, অন্যবারের চেয়ে এবার আমের ফলন কম হয়েছে।

ফলন কম হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তাঁরা জানান, আমগাছে মুকুল আসার সময় ঘন ঘন বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় মুকুল ঝরে গেছে। এ ছাড়া আমের ছোট ছোট গুটি আসার সময়ও দ্বিতীয় দফার ঝড়েও আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপরও চাষিরা সঠিক পরিচর্যা করে সময়মতো ভিটামিন ও কীটনাশক ছিটাচ্ছেন, যাতে আমের ফলন ভালো হয়।

মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের আমচাষি আবদুস সালামের ১৪ একর জমির ওপর আমবাগান। তিনি বলেন, এ বছর আমের ফলন কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভালো দাম পাওয়া যাবে। কেননা, এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের আমবাগান কেনার ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে।

একই এলাকার রহুল আমিন তিন একর জমিতে আমবাগান করেছেন। তিনি বলেন, দুই বছর করোনার কারণে তেমন ব্যবসা না হলেও এবার খুব ভালো ব্যবসা হবে। তবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে এবার আমের ক্ষতি হয়েছে।

আমচাষি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘চার একর জমির আমবাগানে আমের ফলন একেবারে খারাপ বলা যাবে না। তবে এখনো ভয় হচ্ছে, যদি ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।’

পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষি আরিফ মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো রয়েছে। গাছের আমও বেশ মজবুত হয়ে উঠছে। জুনের মাঝামাঝি এই আম মৌসুম শুরু হবে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাগান কিনতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন। দরদাম করছেন।

আমচাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর ১২০-১৩০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে হাঁড়িভাঙাসহ বিভিন্ন জাতের আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

এদিকে হাঁড়িভাঙা আম দেশ-বিদেশে সরবরাহে প্লাস্টিকের ক্যারেট, সুতলি, খাঁচা, পেপারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। আম বহনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। ৮০-১০০ টাকার ক্যারেট ১০০-১২০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে সুতলি এবং পেপারের দামও।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, এ বছর ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত বছর ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় ফলন কম হলেও প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ টন আম পাওয়া যাবে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আম আসা শুরু হয়ে জুনের শেষ পর্যন্ত ভরা মৌসুম থাকবে। তিনি আরও জানান, সরকার নির্ধারিত জুনের মাঝামাঝি সময়ের আগে আম বাজারজাত না করার জন্য আমচাষিদের অনুরোধ জানিয়েছে। লাভের আশায় যেন আগাম পাড়া না হয়।