হাওরপাড়ে বেচাকেনা স্থবির

হাকালুকি হাওরের পানিতে তলিয়ে গেছে বাজার। গতকাল মৌলভীবাজারের বড়লেখার কাননগো বাজারেপ্রথম আলো

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের শত বছরের পুরোনো কাননগো বাজার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সে বাজারটিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। হাওরপাড়ের বড় গ্রামীণ এই বাজারে এখন ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা নেই বললেই চলে। বাজারজুড়ে এখন হাকালুকি হাওরের পানি।

শুধু কাননগো বাজারই নয়, হাকালুকির পানি বাজারের চারদিকেই ঢেউ খেলছে। রাস্তাঘাট ডুবে আছে। বাজারের প্রায় শতভাগ দোকানেই পানি উঠেছে। অনেক দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় ক্ষুদ্র ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ব্যবসায়ী, বণিক সমিতি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে বাজারটিতে হাকালুকি হাওরের পানি প্রবেশ করে। তখন অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ী তাৎক্ষণিক কিছু মালামাল সরানোর সুযোগ পেয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী পানির উচ্চতা কতটুকু হতে পারে, তা আন্দাজ করতে পারেননি। পানিতে সিমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছেন না। বাজারে যেমন পানি, তেমনি এলাকার বাড়িঘরেও পানি। গ্রামের সড়কগুলো এখনো তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। নৌকা ছাড়া বাজারে আসার কোনো সুযোগ নেই।

হোমিও চিকিৎসক মিন্টু বিশ্বাস গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের কোনো দোকানই শুকনো নেই। তাঁর দোকানে এক ফুট পানি ছিল। আগের চেয়ে পাঁচ-ছয় ইঞ্চি পানি কমেছে। কিন্তু খুব ধীরগতিতে কমছে।

ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরি দোকানো পানি। আমার সিমেন্ট ভিজি (ভিজে) নষ্ট অইছে (হয়েছে)। বেচাকিনি নাই। সম্পূর্ণ বাজার পানিয়ে মারা (পানিতে ডোবানো)। কোনো দোকান ভাসাইল (ভাসানো) নাই।’

বাজার ডুবে যাওয়ায় মরা সোনাই নদীর ব্রিজের ওপর অস্থায়ী চায়ের দোকান দিয়েছেন আলী আহমদ। গতকাল সকালে তিনি বলেন, ‘পানিয়ে আমরারে মোর লওয়াই লাইছে (তলানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে)। পুলর (ব্রিজের) ওপর আমরা কয়েকজন কোনো সুরত (কোনোভাবে) খাড়াইয়া জান বাচাইরাম (দাঁড়িয়ে প্রাণ বাচাচ্ছি)।’

কাননগো বাজার বণিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বাজারটি শত বছরের পুরোনো। প্রায় ৫০ বছর ধরে জমজমাট। হাকালুকি হাওরপাড়ে এটি বড় বাজার। প্রায় সোয়া ৩০০ ছোটবড় স্থায়ী দোকান আছে। সোম, বুধ ও শুক্রবার সাপ্তাহিক হাটবার হলেও প্রতিদিনই বাজার জমজমাট থাকে।

বণিক সমিতির সদস্যসচিব রুহুল আমীন বলেন, এই বাজার একটা মিলনমেলা। সকাল-বিকেল এলাকার মানুষ বাজারে না এলে শান্তি পায় না।

রুহুল আমীন আরও বলেন, অনেক মালামাল ভিজে নষ্ট হওয়ায় অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাজারে প্রতিদিন চার-পাঁচ লাখ টাকার বিক্রি হয়। এখন সব বন্ধ। আর্থিক সহযোগিতা না পেলে ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।