হাওরের বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট, দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা

* এ রোগে প্রথমে ধানগাছের শীষ ভেঙে যায়, ধান সম্পূর্ণ শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়, শুকিয়ে যায় ধানগাছের পাতাও।

* এবার কিশোরগঞ্জের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।

* অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৯০ হেক্টর।

কিশোরগঞ্জের হাওরে এখন মাঠে মাঠে বাতাসের সঙ্গে দুলছে বোরো ধানের শিষ, সেই সঙ্গে দুলছে চাষির স্বপ্ন। গত বুধবার কিশোরগঞ্জের ইটনার এলংজুরি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তাঁদের জীবিকার অন্যতম অবলম্বন বোরো ধানের খেতে দুঃস্বপ্ন হয়ে এসেছে ‘নেক ব্লাস্ট’। এ রোগে ধানের শিষ বের হওয়ার পর শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়। আগাম জাতের ধান বিআর–২৮ ধানের খেতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে এ রোগ। ধানের ভয়াল এ রোগ দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সঠিক সময়ে পরামর্শ পাননি বলেও অভিযোগ কৃষকদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমি। অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৯০ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। আর হাওরবহির্ভূত উজান এলাকায় চাষ হয়েছে ৬৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাওরে এখন মাঠে মাঠে বাতাসের সঙ্গে দুলছে বোরো ধানের শিষ, দুলছে চাষির স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে নেক ব্লাস্ট। এ রোগে সংক্রমিত জমির ধান কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন চাষি। কিশোরগঞ্জের হাওর–অধ্যুষিত ইটনা উপজেলার এলংজুরি, বড়িবাড়ি, সোহেলা, ইটনার বড় হাওরসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, মোট জমির প্রায় এক–চতুর্থাংশ জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে।

কৃষকেরা বলেন, বিআর–২৮ ধানের জমির অন্তত এক–চতুর্থাংশ নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হচ্ছে। এলংজুরি এলাকার কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, তিনি এবার ছয় একর জমিতে বিআর–২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে প্রায় দেড় একর জমির ধান নেক ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণে শুকিয়ে গেছে। এ নিয়ে তিনি দিশাহারা। বাকি ধান নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

একই এলাকার সিরাজ মিয়া দুই একর জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। তবে গত এক সপ্তাহের মধ্যে নেক ব্লাস্টে তাঁরও প্রায় অর্ধেক জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। হতাশায় অনেকটা ভেঙে পড়েছেন এ কৃষক। শফিকুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, তাঁর চার একর জমির ধানের মধ্যে এক একরের বেশি নেক ব্লাস্ট রোগে চিটা হয়ে গেছে।

অন্তত ১০–১৫ জন কৃষক বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ছড়িয়েছে নেক ব্লাস্ট রোগ। এ রোগ সংক্রমণের কারণে প্রথমে ধানগাছের শিষ ভেঙে যায়, ধান সম্পূর্ণ শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়, শুকিয়ে যায় ধানগাছের পাতাও। জেলার কয়েক শ কৃষক এ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা যদি তাঁদের সময়মতো পরামর্শ দিতেন, তাহলে হয়তো তাঁরা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতেন না।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, হাওরাঞ্চলের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১০ হেক্টর জমির ধান নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন তাঁরা।

ওই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ায় নেক ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ কিছু কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমরা কৃষকদের এ রোগ থেকে প্রতিকারের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা কৃষকদের ব্রি–২৮ ধান চাষ করতে নিরুৎসাহিত করি। কারণ, এই জাত অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। এখন আমরা পরামর্শ দিই কৃষকদের ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করতে। কিন্তু আগাম ফসল তোলার জন্য কৃষকেরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ না নিয়ে ব্রি-২৮ চাষ করেন। এ ধানে নেক ব্লাস্ট বেশি হয়। তবে আশা করি, নেক ব্লাস্টের সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে। চাষিরা যেন এ নিয়ে আতঙ্কিত না হন।’