হামলার ভয়ে বাঁশঝাড়ে রাত কাটাল শিশুটি

সব কিছু পুড়ে শেষ। স্বজনকে ধরে কাঁদছেন ভুক্তভোগী এক নারী। সোমবার রংপুরের পীরগঞ্জের বড়করিমপুরে।
ছবি: প্রথম আলো

অনেকের মতো ৯ বছরের শিশুটিও হামলাকারীদের তাণ্ডবলীলা দেখেছে। ভয়ে শিশুটি ঘরে থাকতে পারেনি। রাতের অন্ধকারে একা পাশের জঙ্গলের বাঁশে উঠে আশ্রয় নেয়। সেখানে কেটে যায় সারা রাত।

শিশুটির মা–ও প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ধানখেতে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর মা পুলিশের অভয় পেয়ে ধানখেত থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন, ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। ভোর পেরিয়ে তখন চারদিকে আলোকছটা। মা খুঁজতে থাকেন বুকের ধন শিশুটিকে। না পেয়ে কান্না জুড়ে দেন। এ সময় অনেকেই নাম ধরে শিশুটিকে ডাকতে থাকেন। একপর্যায়ে শিশুটি বাঁশের আগা থেকে সাড়া দেয়।

গ্রামের বাসিন্দা হরিপদ রায় জানান, আতঙ্কিত শিশুটিকে বুঝিয়ে বাঁশের আগা থেকে নামিয়ে আনা হয়। তখন মা তাঁর সন্তানকে বুকে চেপে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
শিশুটির মা বলেন, ‘আমি সন্তানকে ফিরে পেয়েছি, আর কিছু চাই না। তবে যারা আমার বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুট করেছে, তাদের শাস্তি চাই।’

শিশুটির সঙ্গে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কথা বলেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এ সময় তার চোখেমুখে স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ ছিল। কথা বলতেই সে কান্না জুড়ে দেয়। শিশুটির মা–ও নিজেকে সামলাতে পারেননি। মা-ছেলের এমন কান্নায় উপস্থিত অনেকের চোখ ভিজে যায়।

শিশুটির মা বলেন, ছেলেটা কাল (রোববার) দুপুরে ভাত খেয়েছে। এরপর আর খায়নি। না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে সে।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় করিমপুর গ্রামে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে রোববার রাতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, হামলাকারীরা অন্তত ১০টি খড়ের পালা ও ২১টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করলে তা সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আগুনে পুড়ে মারা গেছে দুটি গাভি। ৬৫ ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা।