হাসপাতালের শয্যায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে বিস্ফোরণে আহত দুই শিশু

ককটেল বিস্ফোরণে আহত অভিজিৎ সূত্রধরের পায়ে একাধিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

হাসপাতালের দুটি শয্যায় শুয়ে আছে ককটেল বিস্ফোরণে আহত ভাই-বোন। প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছে ওরা। পাশে বসে দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন মা-বাবা। মঙ্গলবার বিকেলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে গেলে এ দৃশ্য দেখা যায়।

সোমবার বিদ্যালয় ছুটির পর বাড়িতে ফেরার পথে বেড়া উপজেলার নাটিয়াবাড়ীতে পাবনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হকের বাড়ির সামনের রাস্তায় পড়ে থাকা ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয় তারা।

আহত দুজন হলো উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়নের চরকান্দি গ্রামের দিলীপ সূত্রধরের ছেলে অভিজিৎ কুমার সূত্রধর (১১) ও মেয়ে মন্দিরা সূত্রধর (১০)। তারা নাটিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক রিফাত আরা ইসলাম বলেন, অভিজিৎ কুমারের ডান পায়ে এবং মন্দিরার ডান পা ও হাতে ক্ষত তৈরি হয়েছে। এসব ক্ষত থেকে লোহার পেরেকের অংশ বেরিয়ে আছে। ব্যথায় দুজনের জ্বর এসে গেছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে পুরোপুরি সেরে উঠতে বেশ কিছুদিন লাগবে।

সন্তানের পাশে বসে থাকা দিলীপ সূত্রধর বলেন, তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রি। অভাব-অনটনের সংসারে দুই সন্তানই তাঁর সম্বল। ছেলে অভিজিৎ সূত্রধর জন্মের সময় তাঁর স্ত্রী মারা যান। আবার বিয়ের পর মেয়েটির জন্ম। দ্বিতীয় স্ত্রী-ই দুই সন্তানকে লালন-পালন করেন। ওরা এভাবে আহত হওয়ায় অসহায় বোধ করছেন এ দম্পতি। ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঁচ হাজার ও স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুই হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ওই টাকাতেই সন্তানদের চিকিৎসার প্রাথমিক খরচ চালিয়েছেন। বাকি খরচ কীভাবে চালাবেন, সেটা নিয়ে চিন্তায় আছেন।

দিলীপের স্ত্রী মন্দিরা রানী সূত্রধর বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজন খুব ভয় পেয়েছে। রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার কেঁপে ওঠে। সকাল থেকে ব্যথা ও জ্বরে কাতরাচ্ছে।

আহত মন্দিরা সূত্রধরের পাশে তার মা কবিতা রানী সূত্রধর
ছবি: প্রথম আলো

এ সময় শুয়ে থাকা দুই শিশুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ওরা কিছু বলেনি। শুধু ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। আর মাঝেমধ্যে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল।

জানতে চাইলে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরিত বস্তুটি ককটেল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কারা কী কারণে ককটেলটি রাস্তায় ফেলে রেখেছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ওই দুই শিশু তাদের মা কবিতা রানী সূত্রধরের সঙ্গে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হকের বাড়ির সামনে পৌঁছানোর পর পলিথিনে মোড়ানো একটি বস্তু দেখতে পেয়ে তাদের একজন খেলার ছলে তাতে লাথি মারে। এ সময় বিকট শব্দে বস্তুটি বিস্ফোরিত হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয় লোকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দুই শিশুকে স্থানীয় একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।