হাসপাতাল চালুর আগেই গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ক্লিনিক

এই হাসপাতালের দুই পাশের সাবালিয়া ও কোদালিয়া আবাসিক এলাকা চিকিৎসা-বাণিজ্য এলাকায় পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ক্লিনিক
প্রথম আলো

টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫ তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এখনো চালু হয়নি ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল। কিন্তু এ হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র।

এই হাসপাতালের দুই পাশের সাবালিয়া ও কোদালিয়া আবাসিক এলাকা চিকিৎসা-বাণিজ্য এলাকায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালটি চালু হলে এসব ক্লিনিকের দালাল চক্র হাসপাতাল থেকে রোগী টানতে সক্রিয় হবে, এতে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হাসপাতাল চালুর আগেই দালাল চক্র নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ওই চত্বরেই ১৫ তলাবিশিষ্ট ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালের আশপাশে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র স্থাপন শুরু হয়। হাসপাতাল ভবনের দক্ষিণ পাশের সাবালিয়া এবং উত্তর পাশে কোদালিয়ায় একের পর এক ক্লিনিক চালু হয়। এলাকাটি এখন ক্লিনিকপাড়ায় রূপ নিয়েছে।

গত শনিবার হাসপাতালের এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এর আধা বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে ৫৬টি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র। এ ছাড়া শতাধিক ওষুধের দোকান। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এগুলোর ৯০ ভাগ গড়ে উঠেছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন নির্মাণ শুরু হওয়ার পর গত দুই-তিন বছরে। কয়েকজন ক্লিনিকমালিক জানান, এখানে ক্লিনিক চালুর পর থেকে তাঁদের বেশির ভাগ লোকসান গুনতে হচ্ছে। হাসপাতাল চালু হলে প্রচুর রোগীর সমাগম হবে। তখন তাঁদের ক্লিনিকগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, এ আশাতেই বসে আসেন।

হাসপাতালের উত্তর পাশে সাবালিয়া এলাকার বাসিন্দা খন্দকার আতাউল হক জানান, কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে অনেক ক্লিনিক হচ্ছে। এতে এ এলাকায় বাসাভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। তিন বছর আগে যে বাসা ১০ হাজার টাকা ভাড়া ছিল, এখন সে বাসার ভাড়া ৪০ হাজার টাকা।

এদিকে হাসপাতাল ঘিরে এত বেশি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র গড়ে ওঠার বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না নাগরিক সমাজ এবং ক্লিনিক ব্যবসায়ী সমিতি। তাদের অভিমত, এসব ক্লিনিকের মালিক রোগী আনার জন্য হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করবেন।

সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শামছুল হুদা জানান, হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে এসে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে রোগীরা ক্লিনিকে যেতে যাতে বাধ্য না হন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শুরুতেই সে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি এম শিবলী সাদিক জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতালের চারপাশে ক্লিনিক গড়ে উঠছে। এদের প্রভাবে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার পরিবেশ নষ্ট হবে। শুরু থেকেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য এলেন মল্লিক জানান, হাসপাতালটিতে দালাল চক্র যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে জন্য শুরু থেকে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

৫০০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, হাসপাতালটির বহির্বিভাগে সেবা প্রদান শুরু হয়েছে। আগামী জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই এই হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মানুষ যাতে এখানে এসে কোনো হয়রানির শিকার না হয়ে সেবা গ্রহণ করতে পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।