হেফাজতের সহিংসতায় স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত, থামে না অনেক ট্রেন

হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ছয় মাসেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেলস্টেশনের সংস্কারকাজ শেষ হয়নি। এখনো হামলার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া সিগন্যাল ব্যবস্থা ও প্যানেল বোর্ড নতুন করে বসানো হয়নি। এ কারণে স্টেশনটিতে অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ আছে। যে কটি ট্রেন থামে, সেগুলো প্ল্যাটফর্মে না দাঁড়িয়ে স্টেশনের ২ নম্বর (ডাউন) ও ৩ নম্বর (আপ) লাইনে থামছে। এতে ট্রেনে ওঠানামা করতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এ স্টেশনে আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী রেলপথের ১৪টি আন্তনগর, ১২টি মেইল, ১টি কমিউটারসহ ২৭টি ট্রেন যাত্রাবিরতি করত। গত ২৬ মার্চ হেফাজতের সহিংসতার পর থেকে এ স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর করোনার কারণে এপ্রিল থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ২৪ মে সারা দেশে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। আর ১৫ জুন থেকে এ স্টেশনে ১০টি মেইল, ২টি আন্তনগর ট্রেন, ১টি কমিউটারসহ ১৩টি ট্রেন যাত্রাবিরতি দিচ্ছে। কিন্তু ট্রেনগুলো এখন আর প্ল্যাটফর্মে না দাঁড়িয়ে স্টেশনের ২ নম্বর (ডাউন) ও ৩ নম্বর (আপ) লাইনে থামছে। এতে প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে লাইন মাড়িয়ে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের।

জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় সময় লাগছে। সবকিছু মেরামত শেষ হলে ট্রেনের যাত্রা বিরতিসহ সবকিছু স্বাভাবিক হবে।

১৭ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করেছে। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে ট্রেনটি স্টেশনের ২ নম্বর লাইনে দাঁড়িয়েছে। এতে ট্রেনে ওঠানামা করতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা রেলপথে চলাচলকারী তিতাস কমিউটার ট্রেন। দুপুরে একই চিত্র চোখে পড়ল।

এ সময় কথা হয় আবু বক্কর সিদ্দিক নামের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যেতে ২৮৫ টাকায় চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি বন্ধ থাকায় আখাউড়া রেলস্টেশনে নেমেছি। সেখান থেকে ৮০ টাকা খরচ করে শহরে আসতে হয়েছে। স্টেশনে যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা থাকলে ১১০ টাকার বেশি খরচ হতো না। কিন্তু এখন সময়, টাকা, দুর্ভোগ—তিনটিই বেড়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্টেশনমাস্টার সোয়েব আহমেদ বলেন, ২৬ মার্চ হেফাজতের সহিংসতায় রেলস্টেশনের সিগন্যাল ব্যবস্থা, প্যানেল বোর্ডের কক্ষসহ সবকিছু পুড়ে গেছে। রেললাইনের ছয়টি পয়েন্ট ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তবে পয়েন্টগুলো মেরামত করা হয়েছে। প্যানেল বোর্ডের কক্ষের মাটির নিচের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে থাকলে তা দ্রুতই সংস্কার করা হবে।

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আবদূন নূর বলেন, ‘স্টেশনে সব আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে আমরা একাধিক কর্মসূচি পালন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত রেলস্টেশনের সংস্কারকাজ চলছে ধীরগতিতে।’

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। এসব স্থাপনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে যন্ত্রপাতি স্থাপনে সময় লাগছে। দ্রুত এসব স্থাপন হয়ে গেলে আগের মতো সব ট্রেন যাত্রাবিরতি করবে।

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা বিকেল চারটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে তাঁরা স্টেশনে থাকা ট্রেনের সিগন্যাল প্যানেল বোর্ডে আগুন ধরিয়ে দেন। একে একে স্টেশনের সাতটি কক্ষে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁরা শহরের কলেজপাড়া এলাকায় রেলগেট, রেললাইনের ছয়টি পয়েন্ট ভাঙচুর করেন।