হেফাজত ইস্যুতে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্তায় মামলা, আ.লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা আফজাল খান
ছবি: সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতা আফজাল খানকে হেনস্তা ও আটকে রাখার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় এই ঘটনার নেতৃত্বে থাকা আল মুজাহিদ (২৫) ও জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমসহ (৬৫) ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে মামলায় আসামি করা হয়।

আফজাল খানের বাড়ি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি ঢাবি ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক। গতকাল বুধবার রাতে তিনি বাদী হয়ে মামলা করেন।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্তা ও অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় গতকাল রাতে ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ধরমপাশা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

ছাত্রলীগ নেতা, প্রত্যক্ষদর্শী ও ধরমপাশা থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা আফজাল গত ২৯ মার্চ দুপুরে ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। ঘণ্টা তিনেক পর তিনি স্ট্যাটাসটি শুধু নিজে দেখতে পাওয়ার মতো (অনলি মি) ব্যবস্থা করেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু যুবক এর স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ওই ছাত্রলীগ নেতা নিজের গ্রাম মহেশপুর থেকে জয়শ্রী বাজারে যান। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের ছেলে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের কারিগর আল মুজাহিদ (২৫) বিভিন্ন বয়সী ৩০ থেকে ৪০ জনকে নিয়ে কেন ওই পোস্ট দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা জানতে চান। আফজাল তখন উপস্থিত লোকজনকে বলেন, তিনি হেফাজতে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কোনো পোস্ট দেননি। তবে হেফাজতের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিবাদে পোস্ট দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

এ নিয়ে আফজাল ও মুজাহিদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। সেখানে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে মুজাহিদ ওই ছাত্রলীগ নেতার শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। আফজালের কয়েকজন বন্ধু ও স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুজাহিদের পক্ষের লোকজন বেশি হওয়ায় তাঁরা আফজালকে জয়শ্রী বাজারে থাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আটক করে রাখেন। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে তখন তিন শতাধিক মানুষ অবস্থান নেয়।

খবর পেয়ে ধরমপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আফজালের বিপক্ষে জড়ো হওয়া মানুষকে শান্ত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানের ভাষ্য, ওসির নির্দেশে তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়। উপস্থিত লোকজনের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে ধরমপাশা থানার পুলিশ। এরপর তাঁকে ধরমপাশা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পেয়ে মাঝপথেই পুলিশ হাতকড়া খুলে দেয়। থানায় তিনি রাত সাড়ে আটটার দিকে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। পুরো ঘটনার বিবরণ সাদা কাগজে লিখে তাতে সই করে তিনি থানা থেকে ছাড়া পান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল মুজাহিদ দাবি করেন, ‘হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে স্ট্যাটাস দেওয়ার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। ছাত্রলীগ নেতা তখন ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। হেফাজতকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ও ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করায় থানা-পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় লোকজন তাঁকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রাখেন। এর চেয়ে বেশি কিছু হয়নি।’

আরও পড়ুন

এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বিকেলে আল মুজাহিদের বাবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের (বহিষ্কৃত) সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে থানায় এনে আটক করা হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার পর অভিযান চালিয়ে গতকাল রাত তিনটার দিকে এজাহারভুক্ত আসামি মো. রফিককে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়।

ধরমপাশা থানার ওসির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) মো. আতিকুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার সকালে মামলা দায়ের ও দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার দুজনকে আজ আদালতে পাঠানো হবে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।