হ্যাচারিতে জন্ম নেওয়া ১৮৫টি কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত

কচ্ছপের বাচ্চাগুলো বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে রামুর প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার সৈকতে বালুচরের হ্যাচারিতে জন্ম নেওয়া ১৮৫টি কচ্ছপের বাচ্চা বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানীর সোনাপাড়া ও রামুর প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে এসব বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়। এরপর এক-দুই দিন বয়সী বাচ্চাগুলো ঢেউয়ের সঙ্গে ছুটে চলে যায় গভীর সাগরে। বন বিভাগের সহায়তায় বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এসব বাচ্চা অবমুক্ত করে।

অবমুক্তের সময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার, বন সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সভাপতি ও কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আয়াছুর রহমান, নেকমের প্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান, নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা (এনআরএম) বিষয়ের ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।

আবদুল কাইয়ুম বলেন, ১৫ জানুয়ারি থেকে তিন মাসে সৈকতে ডিম পেড়েছিল অলিভ রিডলে জাতের ২০টির বেশি কচ্ছপ। ডিমগুলো সংগ্রহ করে বালুচরের হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়। ৬০ থেকে ৯০ দিনের মাথায় ডিমগুলো থেকে বাচ্চা বের হয়ে আসে। রোববার সকালে ইনানীর সোনারপাড়া হ্যাচারিতে ১২০টি এবং রামুর প্যাঁচার দ্বীপ হ্যাচারিতে ৬৫টি কচ্ছপের বাচ্চা বালুর নিচ থেকে উঠে আসে। বাচ্চাগুলো সোমবার দুপুরে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। সৈকতের বালুচরের একাধিক হ্যাচারিতে আরও কয়েক হাজার ডিম পুঁতে রাখা আছে। কিছুদিনের মধ্যে এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে।

শফিকুর রহমান বলেন, সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ ও প্রজনন প্রক্রিয়ার তদারক করে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট। বেশ কয়েক বছর ধরে সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার সৈকত থেকে কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করছে সংস্থাটি। সেন্ট মার্টিনে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। কক্সবাজার অংশে সংগৃহীত হয়েছে প্রায় ছয় হাজার ডিম। দুই মাস পর ডিমগুলো থেকে বাচ্চা বের হয়। পরে বাচ্চাগুলো সাগরে অবমুক্ত করা হয়।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, কচ্ছপ প্রকৃতির সুইপার। সমুদ্রের আবর্জনাগুলো ভক্ষণ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে কচ্ছপ। কিন্তু সমুদ্রে মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে মারা পড়ছে অসংখ্য মা কচ্ছপ। পর্যটন বিকাশের কারণে সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে অতিরিক্ত মানুষের সমাগম, হইচই, আলোকায়নের ফলে ডিম পাড়ার পরিবেশ হারায় মা কচ্ছপ। তা ছাড়া ডিম পাড়তে মা কচ্ছপ সৈকতে পৌঁছালে দলবদ্ধ কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে, মরছে অনেক মা কচ্ছপ। কচ্ছপের ডিমও খেয়ে ফেলে কুকুর। এর মধ্যে নেকম কিছু ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে বাচ্চা ফুটিয়ে সাগরে কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্তির মাধ্যমে কচ্ছপ বিলুপ্তি ঠেকাচ্ছে।

প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে কচ্ছপসহ সব সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য নিরাপদ প্রজনন ও আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে বলে জানান সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে হলে প্রাণীকুলের উপস্থিতি জরুরি। আমাদের উচিত প্রকৃতি রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা।’