১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নগর ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ২৫ তলা এই ভবনের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের কাজও শেষ হয়েছে। নগরের আন্দরকিল্লায় করপোরেশনের বর্তমান ভবন ও পাশের খোলা জায়গায় নতুন নগর ভবন নির্মাণ করা হবে। তিন মাস পর ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে। তখন সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
করপোরেশন সূত্র জানায়, স্থাপত্য-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘প্রণয়ন’ নতুন নগর ভবনের নকশা তৈরি করেছে।
নতুন নগর ভবনের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, করপোরেশনের কার্যক্রম ও সেবার পরিধি বেড়ে চলেছে। এ জন্য নতুন নগর ভবন নির্মাণ করা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এই ভবনটি হবে একটি আইকনিক ভবন। আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে নতুন নগর ভবন নির্মাণের বিষয়টি।’
মেয়র বলেন, নগর ভবন নির্মাণে জনতা ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি ঋণ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ব্যাংকটি ঋণ দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর নগর ভবনের পাঁচটি তলা (ফ্লোর) ভাড়া দেওয়া হবে। এর আয় দিয়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ৫৩ দশমিক ৩৮ কাঠা জায়গার ওপর নতুন নগর ভবন নির্মাণ করা হবে। ২৫ তলা এই ভবনের প্রথম তিনতলা রাখা হয়েছে গাড়ি রাখার জন্য। পরের পাঁচটি তলা শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হবে। এর ওপরের তলাগুলোতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চলবে। বর্তমান নগর ভবন পশ্চিমমুখী হলেও নতুন ভবনটি হবে দক্ষিণমুখী। ভবনটিতে সম্মেলনকক্ষ ও ফুড কোর্ট রাখা হবে।
নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্রণয়ন’-এর প্রধান স্থপতি সোহেল মোহাম্মদ শাকুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম অনেক পুরোনো শহর। এই শহরের অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। নগর ভবনই নগরকে প্রতিনিধিত্ব করবে। নতুন নগর ভবনের নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে দূর থেকে দেখলেই বোঝা যাবে এটি নগর ভবন।’
নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ভবনের প্রথম ছয়তলার প্রতিটির আয়তন হবে ১৬ হাজার ৭৭৬ বর্গফুট। এর ওপরের তলাগুলোর আয়তন হবে ১২ হাজার ২৩২ বর্গফুট করে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান ভবনটি ১৯৬৫ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা, ওয়ার্ড সংখ্যা, লোকবল, সেবার মান ও কার্যক্রমের পরিধি বেড়েছে, যা বর্তমান ভবন থেকে পরিচালনা করা কঠিন। তাই নতুন নগর ভবন নির্মাণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
মোহাম্মদ মনজুর আলম আরও বলেন, ‘আমার আগের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী নতুন নগর ভবনের কাজ শুরু করেছিলেন। আমি এর পাইলিংয়ের কাজ করেছিলাম। এখন নতুন মেয়র নগর ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে নগর ভবন নির্মাণ করা হোক, তা আমি চাই।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর আমলে নগর ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ১১ মার্চ ২০ তলাবিশিষ্ট নগর ভবনের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর করেছিলেন। তবে ওই বছরের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলে নগর ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের আমলে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। চার মাস পর আবার নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান নগর ভবন ভেঙে নতুন নগর ভবন নির্মাণ করা হবে। আপাতত সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দুটি পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে নগর ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে টাইগারপাস এলাকায় থাকা করপোরেশনের সাততলা ভবনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্থানান্তর করা হবে। এটি না হলে দেওয়ানহাট আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।