১৭ মাসের প্রকল্প ৩ বছরে

৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে এখন দেড় বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সড়কের মাঝে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই ৬৫ ভাগ কাজ করা হয়েছে। সম্প্রতি যশোর-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পরিষদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের রাজারহাট-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। ১৬৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদকালে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে এখন দেড় বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে ১৭ মাসের প্রকল্প তিন বছরে গড়াচ্ছে। এ কারণে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে চলাচলে মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

মেয়াদকালে কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সড়কটি চারটি অংশে ভাগ করে ২০২০ সালের ২০ জুলাই চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৭ মাসের সময় বেঁধে দিয়ে এই প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সড়কের মধ্যে ১৬০টি বড় বড় গাছ থাকায় প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়নি। গাছগুলো অপসারণের জন্য তালা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে আট মাস আগে চিঠি দেন। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষেও তা অপসারণ করা হয়নি।

এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। ফলে বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে।
আবুল কালাম আজাদ নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, যশোর

গত বছরের ১৩ এপ্রিল সওজ থেকে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাজারহাট-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়কটির প্রশস্ততা ৫ দশমিক ৫ মিটার থেকে ১৩ দশমিক ৩ মিটারে উন্নীত করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ওই সড়কের উভয় পাশের ১৬০টি গাছ অপসারণ করা প্রয়োজন। কিন্তু গাছের মালিকানা নিয়ে সওজ ও জেলা পরিষদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এ কারণে গাছগুলো অপসারণ বিলম্বিত হচ্ছে। প্রকল্পের কাজের স্বার্থে সড়কের উভয় পাশের ৬ দশমিক ৬৫ মিটারের মধ্যে থাকা গাছগুলো অপসারণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।

সওজের চিঠির পরও সড়কের গাছগুলো অপসারণ করা গেল না কেন, এ প্রশ্নের জবাবে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, গাছগুলো অপসারণের জন্য তিনবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু দরপত্রে কেউ অংশগ্রহণ করেননি। চতুর্থবার দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।

দরপত্রে ঠিকাদারেরা অংশ নিচ্ছেন না কেন, জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, বন বিভাগ থেকে গাছগুলোর যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে লোকসান হওয়ার আশঙ্কায় ঠিকাদারেরা অংশ নিচ্ছেন না।

সরেজমিন দেখা যায়, মনিরামপুর উপজেলা পরিষদ এলাকায় নির্মাণাধীন সড়কের অন্তত তিন কিলোমিটারের মধ্যে বট, মেহগনি, শিশুসহ বিভিন্ন ধরনের বড় বড় গাছ রয়েছে। সড়ক প্রশস্ত করেও তাই তেমন কাজে আসছে না। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় এসব গাছের সঙ্গে যানবাহনের ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটছে। এই অংশে বিটুমিন বাদে বাকি কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে সড়ক টেকসই করার জন্য মনিরামপুর বাজার, চিনাটোলা ও কেশবপুরের অন্তত তিন কিলোমিটারজুড়ে সড়কের একাংশ আটকে সিমেন্ট, বালু, রড দিয়ে ঢালাই করে রাখা আছে। যে কারণে সড়কের একাংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এক ঘণ্টার সড়কে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান।

প্রকল্পের গলার কাঁটা সরু আধা কিলোমিটার রাস্তা

সওজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজারহাট থেকে চুকনগর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক ২৪ ফুট থেকে ৩৬ ফুট বিটুমিনের কাজ হবে। বিটুমিনের দুই পাশে আরও ১২ ফুট খালি জায়গা থাকবে। ফলে সড়কটির কাঙ্ক্ষিত প্রশস্ততা ৩৬ থেকে ৪৮ ফুট। কিন্তু মনিরামপুর বাজার অংশের আধা কিলোমিটার সড়ক মাত্র ২২ থেকে ২৫ ফুট প্রশস্ত। সড়কের দুই পাশে সওজের আর কোনো জায়গা নেই। যে কারণে এই আধা কিলোমিটারের জন্য ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের সুফল পুরোপুরি পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ, ওই অংশ সরু হওয়ায় পুরো সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মনিরামপুর বাজার অংশে প্রায় সড়কের ওপরেই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ওই অংশে পাশাপাশি দুটি বাস অতিক্রম করা কঠিন। যে কারণে জমি অধিগ্রহণ করে প্রশস্তকরণ অথবা বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। ফলে বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে। মনিরামপুর বাজার অংশের জন্য অন্তত ৫ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মাটি পরীক্ষা ও সমীক্ষা যাচাইকরণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।