১৭ মাস পর শিশু হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন

নারায়ণগঞ্জ বন্দরে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে দুই মাস বয়সী শিশু ইমাম হোসেনের লাশ উদ্ধারের ঘটনার প্রায় ১৭ মাস পর হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ রোববার বিকেলে ওই শিশুর মা খাদিজা আক্তার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

পুলিশ সুপার মনিরুল প্রথম আলোকে জানান, খাদিজা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজের সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেন। মনিরুল বলেন, গত বছরের ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্বামী মো. রুবেলের ওপর ‘ক্ষোভ’ থেকে খাদিজা তাঁর দুই মাস বয়সী সন্তান ইমামকে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেন।

পরদিন সকালে বাড়ির পাশের পুকুরে ইমামের লাশ ভেসে ওঠে। ওই সময় খাদিজা দাবি করেন, রাতের কোনো এক সময় কেউ তাঁর শিশুকে চুরি করে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা রুবেল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার পায় পিবিআই। দীর্ঘ তদন্ত শেষে একটি চিরকুটের সূত্র ধরে জানা যায় শিশুটির খুনি আর কেউ নন, স্বয়ং তার মা খাদিজা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আলম বলেন, গত বছরের ৩০ জুলাই পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে গত ৯ জানুয়ারি শিশুটির নানি ও মামা হাতে লেখা একটি চিরকুট তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে দেন। এই চিরকুট তাঁরা ঘটনার কয়েক দিন পর খাদিজার ঘরের মেঝে থেকে উদ্ধার করে সংগ্রহে রেখেছিলেন।

সাইফুল আলম আরও বলেন, ভুলে ভরা চিরকুটে ছয় শব্দে লেখা ছিল, ‘বাচা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথাব’ (বাচ্চা ঘরে ঘরে চুরি করমু সাবধান)। চিরকুটটি হাতে পেয়ে ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দাদের হাতের লেখা সংগ্রহ করে মেলানো হয়। একপর্যায়ে চিরকুটের লেখার সঙ্গে ইমামের মা খাদিজার হাতের লেখার মিল পাওয়া যায়। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে খাদিজার হাতের লেখা ও চিরকুটটি হস্তলেখা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হলে বিশেষজ্ঞরা খাদিজার হাতের লেখা ও চিরকুটের লেখা একই ব্যক্তির বলে মত দেন। বিশেষজ্ঞদের এ মতামত পাওয়ার পর গতকাল সকালে খাদিজাকে আটক করে পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে খাদিজা নিজের সন্তানকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

হত্যার কারণ সম্পর্কে খাদিজা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান, তাঁর স্বামী রুবেল চাইতেন যে খাদিজা চাকরি করে তাঁকে টাকা দেবেন। টাকার জন্য স্বামীর অনবরত চাপের কারণে খাদিজা রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। বাবার বাড়িতে অবস্থানকালে রুবেল স্ত্রী ও সন্তানের কোনো ভরণপোষণ দিতেন না। এ কারণে খাদিজার স্বজনেরা তাঁকে উপহাস করতেন। বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করেন তিনি।