১৮ দিনেও খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ, হতাশ পরিবার

পিরোজপুর জেলার মানচিত্র

পিরোজপুর শহরের সিআইপাড়ায় নিজ বাড়িতে খুন হন সিতারা হালিম (৭৫)। তিনি প্রয়াত অধ্যাপক আবদুল হালিম হাওলাদারের স্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমীর খসরুর মা। হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিন পার হলেও পুলিশ খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি। ফলে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহত সিতারা হালিমের ছেলে আমীর খসরু। তবে পুলিশ বলছে, তারা বসে নেই। এই হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে।

গত ১৬ মে সকালে বাড়ির দোতলার একটি কক্ষের মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় সিতারা হালিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন তাঁর ছেলে আমীর খসরু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে স্থানীয় পিরোজপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শুক্রবার বিকেলে আমীর খসরু মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার মায়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আমাদের বাড়িতে আসা–যাওয়া ছিল। আমার মা পরিচিত ছাড়া অন্য কাউকে দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে দিতেন না। খুনি সামনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে মাকে হত্যা করে পেছনের দরজার তালা খুলে বের হয়ে যায়। ১৮ দিনেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে না পারায় আমি হতাশ।’

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিতারা হালিম বাড়ির দোতলায় একা থাকতেন। বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে পরিচিত লোকজন ও কাজের জন্য শ্রমিকদের আসা–যাওয়া ছিল। বাড়িতে কেউ গেলে সিতারা হালিম প্রথমে ঘরের দরজা খুলে তারপর কলাপসিবল গেটের তালা খুলতেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাতে (১৫ মে) পরিচিত কেউ সিতারা হালিমের বাড়িতে যান। এরপর সিতারা হালিমকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে পেছনের দরজার তালা খুলে পালিয়ে যান। হত্যাকাণ্ডের পর আলমারিতে থাকা জামাকাপড় তছনছ করা ও ট্রাংকের তালা ভাঙা পাওয়া যায়।

পরিবারের সদস্যদের ধারণার সঙ্গে পুলিশের ধারণার অনেকাংশে মিল পাওয়া যায়। পুলিশ বলছে, খুনিদের সিতারা হালিমের বাড়িতে আগে থেকে আসা–যাওয়া থাকতে পারে। ঘটনাস্থলে স্যালাইনের পাইপ পাওয়া গেছে। সিতারা হালিমের গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় মনে করা হচ্ছে, স্যালাইনের পাইপ দিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ জ ম মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ নিহত সিতারা হালিমের বাড়িতে আসা–যাওয়া করতেন, এমন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, নাকি চুরি করতে গিয়ে হত্যা—এ দুই দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। আশা করছি, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’

উল্লেখ্য, ১৬ মে সকাল আটটার দিকে বাড়িতে রং করার জন্য আবদুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তি সিতারা হালিমের বাড়িতে যান। তিনি বাড়ির কল বেল বারবার বাজালেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাননি। এরপর আবদুল কুদ্দুস বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটেদের সঙ্গে নিয়ে দোতলার পেছনের দিকে গিয়ে দরজা খোলা পান। এরপর তাঁরা খোলা দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখেন মেঝেতে সিতারা হালিমের লাশ পড়ে আছে।