২৫০ পরিবারের টাকা আত্মসাৎ

গরু দেওয়ার কথা বলে ২৫০ পরিবারের কাছ থেকে পৌনে তিন লাখ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু আজও কোনো পরিবার এ সহায়তা পাননি।

পঞ্চগড় জেলার মানচিত্র

প্রায় ১২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন হালিমন নেছা (৬০)। অনেক আগেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। নিজের কোনো আশ্রয়স্থলও নেই। তাই মানুষের কাছে হাত পেতে যা পান, তা দিয়ে সংসার চালান এই বৃদ্ধা। বছরখানেক আগে সাবেক এক চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে গরুর পাওয়ার প্রস্তাব পান হালিমন নেছা। অনেক কষ্টে জমানো এক হাজার টাকাও দেন তিনি। তবে টাকা জমা দেওয়ার পর এক বছর পার হয়ে গেলেও হালিমন নেছা গরু বুঝে পাননি।

হালিমন নেছার মতো পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ-দইখাতা ছিটমহলের প্রায় ২৫০ জন মানুষ গরু পাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। বিলুপ্ত ওই ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে এই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারপ্রতি একটি করে গরু দেওয়ার কথা বলে ২৫০ জনের কাছ থেকে ১১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।

এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি দিচ্ছে। আমার গরুর দরকার নাই, যে ধার-হাওলাত করে টাকা দিছি ওইটাই ফেরত চাই।
শরিফা বেগম, ভুক্তভোগী

এ ঘটনায় ১৯ মে বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ-দইখাতা ছিটমহলের বাসিন্দারা আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে নিজের এলাকার মানুষের উপকারের কথা ভেবে অন্যের প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন আবদুল খালেক।

ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবার জানায়, গত বছরের রমজান মাসের আগে আবদুল খালেক একটি মাইক্রোবাসে কয়েকজন লোক নিয়ে বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ-দইখাতা ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি যান। ওই সময় সরকারিভাবে প্রতিটি পরিবারকে গাভী পালনের সুযোগ দেওয়া হবে বলে বাসিন্দাদের জানান আবদুল খালেক। পরিবারপ্রতি ফরম পূরণের জন্য ১০০ টাকা ও জমা হিসেবে ১ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। আবদুল খালেকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওই গ্রামের লোকজন টাকা জমা দেন। আবদুল খালেক তালিকা তৈরি করে প্রায় আড়াই শ পরিবারের কাছ থেকে ১১০০ টাকা করে নেন। তবে টাকা দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও গরু না পাওয়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

পরে গ্রামের লোকজন আবদুল খালেকের কাছে গিয়ে একাধিকবার টাকা ফেরত চান। তবে বারবার ঘুরেও টাকা না পেয়ে অবশেষে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শরিফা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, ‘গাভী দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছে টাকা নিছে, এখন আমরাই টাকা ফেরত চাইতে গেলে দেখে নিবে, মারধর করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এ জন্য উপায় না পেয়ে ডিসি স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি। আমার গরুর দরকার নাই, আমরা যে ধার-হাওলাত করে টাকা দিছি ওইটাই ফেরত চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল খালেক বলেন, তিনি নিজেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুটিমারি ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন এবং ওই বিলুপ্ত ছিটমহলের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম তাঁকে বলেছিলেন ‘কুয়েত মৈত্রী ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে গাভী দেওয়া হবে। তাঁদের কথামতো তিনি মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে তাঁদের কাছে পাঠিয়েছেন।

আবদুল খালেক বলেন, ‘টাকা তুলতে আমিও এখন ঘুরতেছি। এর মধ্যে তাঁদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। আর নিজের পকেট থেকে কিছু টাকা দিয়ে অনেকের টাকা ফেরত দিয়েছি। বাকি টাকা খুব দ্রুত শোধ করব।’

এ বিষয়ে বিলুপ্ত পুটিমারি ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন বলেন, তিনি ওইদিন আবদুল খালেকের সঙ্গে বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ-দইখাতা ছিটমহলের বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলামের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ-দইখাতা ছিটমহলবাসীর অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনওকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।