প্রায় ২৫ বছর পর মানিকগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এত দিন পরে আজ শনিবার সম্মেলন হলেও যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে কমিটি ঘোষণা করায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘেরাও করেন।
দুপুরে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বৃষ্টির কারণে পরে কলেজের মিলনায়তনে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এতে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নীনা রহমানের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমূর রহমান, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার পরপরই দ্বিতীয় অধিবেশন আহ্বান না করে সভাপতি পদে মৃদুলা রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আনোয়ারা খাতুনের নাম ঘোষণা করেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করেন সম্মেলনে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা। এরপর সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সার্কিট হাউসে চলে যান। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সার্কিট হাউসের মূল ফটকের সামনে গিয়ে কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। পরে পুলিশের পাহারায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা সার্কিট হাউস থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে নীনা রহমান সভাপতি ও লক্ষ্মী চ্যাটার্জী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচত হয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর আজ আবার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার পর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম সভাপতি পদপ্রার্থীদের এক পাশে ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের অন্য পাশে দাঁড়াতে বলেন। তখন সভাপতি পদে নীনা রহমান, সেলিনা আক্তার, মৃদুলা রহমান, সখিনা আক্তার ও ফরিদা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক পদে লক্ষ্মী চ্যাটার্জী, আনোয়ারা খাতুন, রোমেজা আক্তার, কাজী শিউলী ও নাজমা আক্তার পৃথক কাতারে দাঁড়ান। এরপর তাঁদের বলা হয়, নিজেরা সমঝোতা করে সভাপতি পদে একজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে একজনের নাম বলেন। তখন সবার উপস্থিতিতে সভাপতি পদে মৃদুলা রহমানকে সমর্থন দেন দুজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে লক্ষ্মী চ্যাটার্জিকে সমর্থন দেন দুজন। এরপর মাহমুদা বেগম সভাপতি পদে মৃদুলা রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আনোয়ারা খাতুনের নাম ঘোষণা করেন। এরপরই সম্মেলনে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলরদের ভোটে কমিটি গঠনের দাবিতে স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগকে কবর দেওয়া হলো। যাঁকে সভাপতি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাঁর বাড়ি হরিরামপুর উপজেলায় এবং সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি সিঙ্গাইরে। জেলা সদরে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য নেতা থাকলেও কমিটিতে তাঁদের রাখা হয়নি। এই কমিটি বাতিলের দাবিতে মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি উপস্থিত প্রার্থীদের মতামত নিয়ে যাঁদের যোগ্য মনে করেছে, তাঁরাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
সংগঠনের জেলা কমিটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মী চ্যাটার্জী বলেন, সম্মেলনে ৬০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত থাকলেও তাঁদের মতামত না নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি অবৈধ পন্থায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেছে। যাঁকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য নন। তিনি সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে থেকে দলের আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসা নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হলো।
সার্কিট হাউসে ঘেরাওয়ের মুখে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।