৩৬ দিন পর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস শুরু

মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রাধ্যক্ষ ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্থবির হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাণ ফিরেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-২-এর ৩০০১ নম্বর কক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন বিভাগে ক্লাস শুরুর মধ্য দিয়ে টানা ৩৬ দিন পর সশরীর ক্লাস শুরু হয়।

সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ২ নভেম্বর সশরীর ক্লাস শুরু করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একটি হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে এ আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নিয়েছিল। এরপরই জরুরি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ সকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের রুটিন অনুযায়ী স্নাতক, স্নাতকোত্তরসহ সব পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা যথারীতি শুরু হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফেরার অনুভূতি জানিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, প্রথম বর্ষের পুরো ক্লাসের সময় কেটেছে অনলাইন ক্লাসে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার আগেই করোনার প্রকোপে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ক্যাম্পাস খুললেও দুই মাসের মধ্যেই আবার বন্ধ হয়ে যায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নেই, কিন্তু এসবের জন্য সেশনজটের ভয় ছিল। এখন ক্লাস নিয়মিত হলে শিক্ষাজীবন স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ৩৬ দিন পর সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে
ছবি: আনিস মাহমুদ

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘সেশনজটে যেন না পড়ি, এ প্রত্যাশা করছিলাম। শিক্ষার্থী, শ্রেণিকক্ষ ও হলে প্রাণচঞ্চলতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। এসব বন্ধ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিস্তব্ধ লাগে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ওই সভার ২৮ দিন পর ১৩ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫টি আবাসিক হল খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ১৬ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি বিধিনিষেধ না থাকলে ২২ ফেব্রুয়ারি সশরীর ক্লাস শুরু হবে। যেহেতু নতুন করে সরকার কোনো বিধিনিষেধ করেনি, তাই মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে।